গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশের পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ যথাযথ কি না তা নিয়ে সন্দিহান সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।

সোমবার (৮ জুলাই) রাতে পিএসসি থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে পিএসসি। বিজ্ঞপ্তিতে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে প্রচারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে সই করেছেন পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষার দুইদিন পরে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের বিষয়টি যথাযথ কি না তা নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এতে বলা হয়, ‘‘গত ৫ জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ের নন-ক্যাডার ‘উপ-সহকারী প্রকৌশলী’ পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ওইদিন পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে প্রতিবেদকের (চ্যানেল টোয়েন্টিফোর টিভির) হোয়াটসঅ্যাপে আসে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।’’

‘স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রতিটি বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬ সেট প্রশ্নপত্র এবং নন-ক্যাডার পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪ সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়। কোন সেটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণ করা হয় পরীক্ষা শুরুর ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট আগে। সেটাও লটারির মাধ্যমে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষার ক্ষেত্রে লটারির সময় দেশের প্রথিতযশা দুজন নাগরিক, কমিশনের চেয়ারম্যান, দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সদস্যসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত থাকেন। একইভাবে নন-ক্যাডার পরীক্ষার ক্ষেত্রে কমিশনের চেয়ারম্যান, দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সদস্যসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত থাকেন।’

‘গত ৫ জুলাই রেলওয়ের নন-ক্যাডার উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে একই নিয়ম অনুসরণ করে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে লটারি করে কোন সেটের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, সে বিষয়টি সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে সংশ্লিষ্টদের এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে কোন সেটের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, তা পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে কারোরই জানার সুযোগ নেই।’

বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসি আরও উল্লেখ করেছে, ‘কমিশনের আওতাভুক্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রশ্নপত্র সমীক্ষণ ও মুদ্রণ সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে করা হয় এবং তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এসব কারণে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।’

পিএসসির দাবি, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি যেকোনো ব্যক্তির নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ থাকে। কিন্তু পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দুইদিন পরে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর কর্তৃক প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের বিষয়টি যথাযথ কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পিএসসির কার্যক্রম ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজসহ জনমনে সুদৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। বিপিএসসির নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম সব মহলে প্রশংসিত হচ্ছে। সেই আস্থা ও বিশ্বাস সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে যথাসময়ে অভিযোগ না হওয়া সত্ত্বেও যদি কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বা প্রতারণা বা অন্য কোনো অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত প্রমাণ হয়, তাহলে কমিশন সংশ্লিষ্টের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।’

এনএম/এসএসএইচ