প্রাথমিক পর্যায়ে ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি বিতরণে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি হতো। এসব বন্ধ করতে সরাসরি শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইলে টাকা পাঠানোর উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসে উপবৃত্তির টাকা ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’র মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ‘মায়ের’ মোবাইলে পাঠানো হয়।

এ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এরপরই শুরু হয় প্রতারণার বিভিন্ন কৌশল। একটি চক্র দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিভাবকদের কাছ থেকে নগদের পিন নাম্বার, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) জালিয়াতি করে শিক্ষার্থীদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে নড়েচড়ে বসেন উপবৃত্তি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। আর প্রতারণা ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে ‘অভিনব কৌশল’।

উপবৃত্তি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগেই ২০২০ সালের অবশিষ্ট ছয় মাসের (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) উপবৃত্তি বিতরণ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এবার একজনের টাকা অন্যজন প্রতারণা করে যাতে তুলতে না পারে সেজন্য ‘ক্যাশ আউট’ ছাড়া বাকি অপশনগুলো বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ একজনের মোবাইল থেকে অন্যজনের মোবাইলে সেন্ট মানিসহ টাকা পাঠানোর অন্যসব অনশনগুলো বন্ধ করা থাকবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ‍উপবৃত্তির টাকা ‘নগদ’ মাধ্যমে পাঠানোর পর যারা প্রতারণা শিকার হয়েছেন বেশিরভাগই টাকা অন্য মোবাইলে সেন্ট মানি করা হয়েছে। অভিভাবকদের কাছ থেকে নগদের পিন নাম্বার, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এ প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। কারা এসব প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত এবং কীভাবে করা হচ্ছে তা তদন্ত করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর কোনো অভিভাবক যেন প্রতারণার শিকার না হন, সেজন্য এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতারণা ঠেকাতে এবার নতুন কৌশল নেওয়া হয়েছে। অভিভাবকের মোবাইলে টাকা যাওয়ার পর ১৫ দিন পর্যন্ত তিনি এ টাকা শুধু ক্যাশ আউট (তুলতে পারবেন) করতে পারবেন। অন্য কাউকে টাকা পাঠানোর যত অপশন আছে সেগুলো এ ১৫ দিন বন্ধ থাকবে। এতে প্রতারণা প্রায় শূন্যের কোটায় চলে আসবে বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, এই ১৫ দিনের মধ্যে অভিভাবকদের তাদের টাকা ক্যাশ আউট করতে উৎসাহী করা হবে। সেজন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে সচেতনামূলক প্রোগ্রাম ও স্ক্রল প্রচার করা হবে। এছাড়াও অভিভাবকদের সচেতন করতে শিক্ষকদের একটি নির্দেশনা পাঠাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।

জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে নগদের মাধ্যমে প্রথম কিস্তির টাকা মোবাইলে পাঠানো হয়। এরপর থেকেই প্রতারকচক্র দেশের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে ফোন দেওয়া শুরু করে। কখনও নগদের এজেন্ট, কখনও শিক্ষা কর্মকর্তা বা প্রধান শিক্ষক পরিচয় দিয়ে পিন নাম্বার, ওটিপি বা উপবৃত্তির টাকা কম গেছে বলে তাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য চায়। আরও টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে বলে ওটিপি চাওয়া হয়। অনেক অভিভাবক না বুঝে সব তথ্য প্রতারকদের দিয়ে দেন। এরপর অভিভাবকদের মোবাইল অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, উপবৃত্তি প্রকল্প ও উপবৃত্তি বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রতারণা ঠেকাতে দফায় দফায় বৈঠক করেন। বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের বৈঠক হয়। এরপর ১৫ দিন ক্যাশ আউট ছাড়া অন্য অপশন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।  

এর আগে প্রতারণার বিষয়টি উপবৃত্তি প্রকল্প কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর সবাইকে সর্তক থাকতে কিছু নির্দেশনা দিয়ে দুই দফা চিঠি জারি করে উপবৃত্তি প্রকল্প। এতে বলা হয়েছে, যেখানেই প্রতারণার খবর পাওয়া যাবে, সেখানে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। এছাড়াও ‘নগদ-কে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা আরও বেশি করে চালানো নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এনএম/জেডএস