গরমে শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে অভিভাবকরা
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ অস্বস্তিতে রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকায় তাপমাত্রা প্রায় প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রির পারদ ছুঁইছুঁই করছে। এরই মাঝে সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি আগামী তিনদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানায় সংস্থাটি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে রোববার (২৮ এপ্রিল) খুলে দেওয়া হয়েছে স্কুল। তীব্র গরমে স্কুল খুলে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের চেয়ে অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছেন বেশি। তাপপ্রবাহ কমার আগেই স্কুল খুলে দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
রোববার (২৮ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর অন্তর্ভুক্ত ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষারত অভিভাবকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
এদিকে সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আরও ৭২ ঘণ্টা বা তিনদিন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন
ল্যাবরেটরি স্কুলটি সকাল ৮টায় পাঠদান শুরু করে। ফলে অভিভাবকদের সকাল ৭টার দিকেই বাসা থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। পরে সাড়ে এগারোটায় স্কুল ছুটি হলে অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ান। এই দীর্ঘ সময় অনেক অভিভাবকই স্কুল প্রাঙ্গণে বসে থাকেন তাদের বাচ্চার ছুটির অপেক্ষায়। আবার অনেকেই নিজ কর্মস্থলে গিয়ে আবার ১১টার দিকে স্কুলে ফেরেন বাচ্চাকে বাসায় নিয়ে যেতে।
স্কুল প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অনেক অভিভাবক মুহসিন হল মাঠের ছায়াযুক্ত অংশে টুলের উপর বসে আছেন। আবার অনেকে ব্যানার সদৃশ কিছু বিছিয়ে বসে আছেন। গাছের নিচে বসে থাকলেও তাদের অনেককেই হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে লক্ষ্য করা যায়। আবার সেই ছায়াযুক্ত স্থানে রোদ চলে আসলে আবার তারা উঠে অন্যত্র বসেন।
ঝিগাতলা থেকে দুই সন্তানকে স্কুলে নিয়ে এসেছেন সালমা আক্তার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই গরমে স্কুল খোলার কোনও প্রয়োজনীয়তা দেখি না। বাচ্চাদের আমরা কিছুটা যত্নে রাখতে পারি, তাদের ভালো-মন্দ আমরা খেয়াল রাখি। কিন্তু আমাদের যে ভোগান্তি হয় সেটা বলে বুঝানোর মত না। বাচ্চাদের চেয়ে অভিভাবকদেরই ভোগান্তি বেশি হচ্ছে। তাপপ্রবাহ কমলে স্কুল খোলার নির্দেশনা দেওয়াটা জরুরি ছিল।
নিজ কর্মস্থল থেকে বাচ্চাকে নিতে স্কুলে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে নিজের অফিসে গিয়েছি। অফিস থেকে তড়িঘড়ি করে এই গরমের মধ্যেই বাচ্চাকে নিতে আসতে হয়েছে। গরমে বাসায় বসে থাকাই কষ্টকর, সেখানে বাসা থেকে স্কুল, আবার সেখান থেকে অফিসে, অফিস থেকে আবার স্কুল থেকে বাচ্চাকে নিয়ে পুনরায় অফিসে যাওয়া লাগছে। এই গরমে শুধু যাওয়া আসা করতেই হাপিয়ে যাচ্ছি। এসময় স্কুল খোলা রাখাটা খুব বাজে সিদ্ধান্ত।
গাছের ছায়ায় বসে থাকা অভিভাবক নাজনীন আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল সকাল বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে এসেছি। বাসায় গিয়ে আবার স্কুলে আসবো এমন সুযোগ নেই। বারবার রিকশা ভাড়া দেওয়াটাও সম্ভব নয়। ফলে বাধ্য হয়েই এই দীর্ঘসময় ধরে ছায়ায় বসে আছি। তবে অতিরিক্ত গরম হওয়ায় বাসা থেকে হাত পাখা ও বসার টুল নিয়ে এসেছি।
এর আগে শনিবার (২৭ এপ্রিল) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানা হয়েছে, এক সপ্তাহ ছুটির পর রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও খুলছে। তবে ক্লাসের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্লাস হবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৮ এপ্রিল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চলমান থাকবে। এক পালায় (শিফটে) পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। আর দুই পালায় বিদ্যালয়গুলোয় প্রথম পালা সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় পালা সকাল পৌনে ১০টা থেকে থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলমান থাকবে। তবে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আর তাপপ্রবাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি (প্রাত্যহিক সমাবেশ) বন্ধ থাকবে। চলমান দাবদাহের কারণে কোমলমতি শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশুকল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম চালুর বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
কেএইচ/পিএইচ