বছরের প্রথম দিনে শিশুদের হাতে নতুন বই
নতুন বই, মলাটে-পাতায় নতুনের ঘ্রাণ। বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিকের দুই কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী শিশুর হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে তাদের আনন্দ ধরে রাখতে চায় সরকার। সেজন্য বছরের প্রথম দিন ছুটির দিন হওয়ার পরও সারাদেশে কোমলমতি শিশুদের হাতে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে।
বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে বেজায় খুশি শিশুরা। তবে বই বিতরণে স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) ২৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। সেখানে ‘নো মাস্ক, নো বুক’ এমন নির্দেশনাও রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ডিপিই কর্মকর্তারা বলছেন, ভিন্ন একটি পরিস্থিতিতে এবার বই বিতরণ করতে হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বই সরাসরি শিক্ষার্থীর হাতে তুলে না দিয়ে অভিভাবকদের হাতে তুলে দিতে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে সকাল থেকেই শিশুরা স্কুলে চলে আসছে।
মুজিববর্ষের লোগো লাগানো বই দেওয়া হবে।
১২ দিনব্যাপী বই বিতরণ।
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বই পাবে ১ থেকে ১২ জানুয়ারির মধ্যে।
বই বিতরণে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ২৮ দফা নির্দেশনা।
‘নো মাস্ক, নো বুক’।
শিশুরা চলে এলে তাদের হাতেই বই তুলে দিতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বই বিতরণের সময় শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। বই বিতরণের সময় সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সরকারের অন্যান্য দপ্তরে যেসব স্বাস্থ্যবিধি রয়েছে তা অনুসরণ করতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এবার মুজিববর্ষের লোগো লাগানো বই দেওয়া হবে। তাই কোনো অবস্থায় ২০২০ সালের বই বিতরণ করা যাবে না।
বই বিতরণ করতে গিয়ে কেউ যদি অর্থ দাবি করে সেটা স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে অনুরোধ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই সঙ্গে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বাজারে বা অন্য কোনো স্থানে বিক্রি করলে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
বই বিতরণ নিয়ে রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আর বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছুটির দিনেও আমরা প্রাথমিক স্তর খোলা রেখেছি। এ পর্যায়ে শিক্ষকরা শুক্রবার (১ জানুয়ারি) স্কুলে গেছেন এবং শিশুদের মাঝে বই বিতরণ করছেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, এবার ১২ দিনব্যাপী বই বিতরণ করা হবে। এনসিটিবি থেকে মনটরিং করার জন্য কয়েকটি কমিটি করা হয়েছে। তারা জেলা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যেকোনো ধরনের অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ থেকে ১২ জানুয়ারির মধ্যে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বই তুলে দেবে। আগামী ১ থেকে ৩ জানুয়ারি নবম শ্রেণি, ৪ থেকে ৬ জানুয়ারি অষ্টম শ্রেণি, ৭ থেকে ৯ জানুয়ারি সপ্তম শ্রেণি এবং ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং ইবতেদায়ীর এক কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ শিক্ষার্থীকে ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৭টি বই এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দুই কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থীর হাতে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি বই বিতরণ করা হবে।
১৯ ক্যাটাগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বই পাচ্ছে
শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, বেসরকারি ও এনজিও পরিচালিত স্কুলসহ ১৯ ক্যাটাগরির স্কুল এবার বিনামূল্যে বই পাচ্ছে।
যেসব ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যের বই পাবে সেগুলো হলো- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিকের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এনসিটিবি কারিকুলামে চলে এমন কিন্ডারগার্টেন, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ পরিচালিত বিদ্যালয়, কিশোর অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রের বিদ্যালয়, সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া এতিমখানা ও শিশু পরিবারে চালু প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিদেশে অবস্থানরত বিদ্যালয় সেগুলো বাংলাদেশ মিশন ও এনসিটিবির কারিকুলাম দ্বারা পরিচালিত হয়, চা বাগানের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বিদ্যালয়, সরকার অনুমোদন দিয়েছে এমন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়, সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত আবাসন ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের কমিউনিটি স্কুল, রিস্ক প্রোজেক্টের আওতায় পরিচালিত স্কুল, সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের পরিচালিত বিশেষ বিদ্যালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীনস্থ চর জীবিকা কর্মসূচির আওতায় বিদ্যালয়গুলো, উপানুষ্ঠানিক ব্যুরো পরিচালিত বিদ্যালয়, এনসিটিবি কারিকুলাম অনুসরণ করে এমন সব বিদ্যালয়, সেকেন্ড চান্স এডুকেশন পরিচালিত স্কুল।
এনএম/এইচকে