বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ, ৩১টিতে নোটিশ
১৫ শতাংশ কর দিতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর বেকায়দায় পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কর না দেওয়ার অভিযোগে নর্থ সাউথসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেইসঙ্গে বকেয়া কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে দুই ডজনের বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
এদিকে ঈদের আগে ব্যাংক হিসাব জব্দ করায় বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দ্রুত তা খুলে না দিলে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি)।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আবেদন করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।
জানা গেছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এরপর রাজস্ব বোর্ড কর আদায়ে তোড়জোড় শুরু করে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত মোট ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কর পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
ব্যাংক হিসাব জব্দ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো– নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।
আরও পড়ুন
এ ছাড়া কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে এসব চিঠি পাঠানো হয়। এতে আয়কর আইন ২০২৩-এর ২১৪ ধারা মোতাবেক বকেয়া কর পরিশোধের জন্য বলা হয়। ২০০২-০৩ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ১৬ অর্থবছরে মোট ১৮০ কোটি ৫০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬৪ টাকা কর পরিশোধ করতে বলা হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিকে দেওয়া চিঠিতে। সেইসঙ্গে তা ১৫ মার্চের মধ্যে পরিশোধের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কর প্রদানে ব্যত্যয় হলে আয়কর আইন ২০২৩-এর ২৭৫ ধারা অনুযায়ী জরিমানা আরোপসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয় এনবিআরের ওই চিঠিতে।
চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, এনবিআর থেকে কর পরিশোধের চিঠি পেয়েছি। তবে ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়ে এনবিআর কোনো চিঠি এনএসইউকে দেয়নি। মূলত ব্যাংক থেকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু আইনি, তাই আইনজীবীর মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করছি। এর কারণে বেতন-ঈদ বোনাস নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
২০২৩ সালের জুন মাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারের ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায় সংক্রান্ত আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আয়কর আদায় থেকে বিরত থাকতে আপিল বিভাগের আদেশ বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। একইসঙ্গে আয়কর আদায় নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দায়ের করা ৪৬টি রিট হাইকোর্টে চূড়ান্ত শুনানির আদেশ বহাল রাখা হয়।
২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারের ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের দুই প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ আপিল নিষ্পত্তি না পর্যন্ত এ আয়কর আদায় থেকে বিরত থাকতে এনবিআরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
২০০৭ সালের ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয় যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের উদ্ভূত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনর্নির্ধারণ করা হলো। ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে।’
২০১০ সালের ১ জুলাই এনবিআরের আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের উদ্ভূত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।’ এরপর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৪৬টি রিট করা হয়েছিল।
এনএম/এসএসএইচ