জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মশিউর রহমান বলেছেন, নতুন প্রজন্মকে মানবিক ও দক্ষ করে গড়ে তুলছে কাজ করছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। যখনই আমরা বুঝতে পেরেছি ভাষার ব্যবহারের শক্তির সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সংযোগ আছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয় রয়েছে, তখনই আমরা আইসিটিকে অবশ্য পাঠ্য করেছি।

তিনি বলেন, আমরা উদ্যোক্তা সৃষ্টিকে অবশ্য পাঠ্য করেছি। নতুন নতুন বিষয়কে কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করছি। ভাষার শক্তি দিয়ে আধুনিকতাকে, বিজ্ঞানকে গ্রহণ করছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে এ আলোড়ন তৈরি করতে চায়। এর মূল লক্ষ্য বিজ্ঞানমুখী, প্রযুক্তিমুখী, আধুনিক এক ভিন্ন বাংলাদেশ তৈরি, যেটি আগামী দিনে বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে ‘ভাষার অধিকার থেকে স্বাধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম।

সম্মানিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. পবিত্র সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, আমাদের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ আধুনিকতাকেও গ্রহণ করেছে। কিন্তু সামরিক শাসনকে বর্জন করেছে। পুঁজিবাদের ছোবল, অন্য ভাষার ছোবল, অন্য সংস্কৃতির হানা এসব থাকবে ঠিকই কিন্তু সাধারণের শক্তির কাছে সবসময় সবকিছু পরাভূত হবে। এমনকি সামরিক শাসন ও অগণতান্ত্রিক শাসনও। বাঙালির অস্থিমজ্জায়, চিন্তাচেতনায় মানবিকতা আছে। এ কারণে আমরা যুদ্ধবিরোধী হই, মাদকবিরোধী হই, অপসংস্কৃতিকে রুখে দাঁড়াই। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে দূরে থাকি। এসব শক্তির মধ্যে মায়ের ভাষা ব্যবহারের শক্তি আছে।

সম্মানিত আলোচক হিসেবে কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার তার বক্তব্যে ভাষার নানাবিধ ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, শুধু দেশ নয়, ভাষা সুরক্ষায় সারাবিশ্বকে নিয়ে ভাবতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কারণ দেশের ভাষা ব্যবস্থা ভাষাকে প্রভাবিত করছে। একটা দেশে যখন অনেকগুলো ভাষা থাকে তখন সিঁড়ির মতো তাদের ধাপে ধাপে অবস্থান থাকে। একটা আরেকটার পাশে লেগে থাকে। কিন্তু আমাদের মাথার ওপর চেপে আছে ইংরেজি। ভাষাকে ব্রাহ্মণত্বের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। জাত মুছে দিতে হবে। ভাষার ক্ষমতায়নের দ্বারা এটি করতে হবে। নানা জায়গায় ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভাষার লিপি থাকতে হবে। সাহিত্য থাকতে হবে। এর ডিজিটাইজেশন থাকতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্থপতি অধ্যাপক ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদার। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনরা, বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

এনএম/এসএসএইচ