বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে সনদপ্রাপ্ত ইনডেক্সধারী (নিবন্ধিত) শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ ছিল। কিন্তু সর্বশেষ চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সেই সুযোগ স্থগিত করা হয়।

এ নিয়ে চরম হতাশ এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এতে পাঠদানে মনোযোগ হারাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদের বিপরীতে সমপদে বা সমস্কেলে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ চান শিক্ষকরা।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার (২২ অক্টোবর) একটি সভা করতে যাচ্ছে। এতে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকরা উপস্থিত থাকবেন। সভায় শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক/প্রদর্শক/প্রভাষকদের পারস্পরিক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

শিক্ষকরা বলছেন, আমরা স্বল্প বেতনে ৭০০-৮০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করছি। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে বাড়িতে যেতে পারি না। মৃত্যুর পর বাবা-মায়ের জানাজায় পর্যন্ত যেতে পারি না। বেতন পাই ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বেতনে পরিবার নিয়ে কর্মস্থলে থাকার সুযোগ নেই। ভাষাগত সমস্যার কারণে অনেক শিক্ষককে শিক্ষার্থীর হাসির খোরাক হতে হয়। বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের অনেকের স্বামী-সংসার রেখে দূরে থাকতে গিয়ে সংসার ভাঙার উপক্রম।

তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে পারস্পরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের একটি নীতিমালা করতে যাচ্ছে। তবে এ পদ্ধতিতে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকবে না। এক জেলার বা বিভাগের শিক্ষকের সঙ্গে আরেক জেলা বা বিভাগের শিক্ষকের মিউচুয়ালি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করা খুবই দুঃসাধ্য কাজ।

শিক্ষকদের দাবি, শূন্যপদের বিনিময়ে সরকার যদি একটি গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেয় তাহলে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে ইচ্ছুক শিক্ষকরা নিজ উপজেলা বা জেলায় চলে যেতে পারবেন। আর শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের পর আরেকটি নতুন গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিবন্ধিত শিক্ষকদের সেসব পদে নিয়োগ দিলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। কাজটি বদলি পদ্ধতির চেয়ে অনেক সহজ হবে বলে মনে করেন শিক্ষকরা।

এ বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে। মন্ত্রণালয় যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেটি অনুযায়ী কাজ করব।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, রোববার সভা আছে। মন্ত্রী মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই উপস্থিত থাকবেন। সেখানে পারস্পরিক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা হবে।

তবে এমপিও নীতিমালায় বলা আছে, শূন্যপদের বিপরীতে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের কথা– এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সভায় সবাই যার যার অবস্থান থেকে মতামত দেবেন। সিদ্ধান্ত কী হবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বদলির জন্য নিয়োগ নীতিমালার ৭ নম্বর ধারা স্থগিতের পর থেকে বদলি নিয়ে শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে তাদের দাবি জানিয়ে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা আলাদা গণবিজ্ঞপ্তি দাবি করছেন। বদলির নীতিমালা তৈরি করতে গত মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) শিক্ষা সচিব বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।

স্মারকলিপিতে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন অথবা বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন তথা বদলি প্রথা চালুর জন্য নীতিমালা প্রণয়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সচিব বরাবর অনুরোধ জানান শিক্ষকরা।

এনএম/এসএসএইচ