মেডিকেলের ভর্তিযুদ্ধ আজ, এক আসনের বিপরীতে ২৮ জন
দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস তথা মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে শুক্রবার (২ এপ্রিল)। সকাল ১০টা থেকে সারাদেশের ১৯টি কেন্দ্রের ৫৫টি ভেন্যুতে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এক ঘণ্টার এ পরীক্ষা শেষ হবে বেলা ১১টায়।
এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেবেন এক লাখ ২২ হাজার ৮৭৪ ভর্তিচ্ছু। সে হিসেবে এ বছর প্রতি আসনে লড়বেন ২৮ জন।
বিজ্ঞাপন
এ পরীক্ষা বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২ এপ্রিল যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সকাল ৮টার মধ্যে তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। ৯টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রধান ফটক বন্ধ হয়ে যাবে। সাড়ে ৯টার পর কোনো পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ১৯টি মেডিকেল কলেজের ১৯টি কেন্দ্রের ৫৫টি ভেন্যুর জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চারজন পুলিশ সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বা তার প্রতিনিধি প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ঢাকার বাইরের ৪০টি ভেন্যুর জন্য প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর ১৫টি ভেন্যুর প্রশ্নপত্রও ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও অধ্যক্ষ বা তার প্রতিনিধি গ্রহণ করে তা সিলগালা করে রেখে গেছেন। সকালে এসে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষার হলে নিয়ে যাবেন।
স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পরিবহনের সংকট এড়াতে পরীক্ষার্থীদের সকাল ৮টার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পরামর্শ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ভর্তি পরীক্ষায় স্বচ্ছতা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনী, গোয়েন্দা শাখা, শিক্ষা বিভাগ ও বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব শাখা সমন্বিতভাবে কাজ করবে এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে ও আশপাশে এলাকার স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখবে।
কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে হবে
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউসিজি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা সংক্রমণের মধ্যে অবশ্যই কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে হবে। নয়তো বড় একটা ঝুঁকি তৈরি হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে অবশ্যই একাধিক মাস্ক পরে আসতে হবে। হাতে গ্লাভস, প্রয়োজনে মাথায় ক্যাপ পরে আসতে হবে। আর সঙ্গে অভিভাবকদের না নিয়ে আসাই উচিত হবে।
গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ পরীক্ষার্থী
গতবারের তুলনায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। গত বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭২ হাজার। আর এ বছর ভর্তি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৪ জন। পাশাপাশি এ বছর করোনার কারণে সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রের সংখ্যা ১৯টি এবং ভেন্যু ৫৫টি করা হয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রের ভেতরে পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থীদের ও কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে থাকবে বিশেষ নজরদারি।
বেড়েছে আসন সংখ্যা
চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তিতে আরও ২৮২টি আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে এ বছর প্রতি আসনে লড়বেন ২৮ জন পরীক্ষার্থী। ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রস্তুত স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর, থাকবে বিশেষ ব্যবস্থাও
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা পরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করব। ইতোমধ্যেই আমরা জানিয়ে দিয়েছি, প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে মাস্ক পরে কেন্দ্রে আসতে হবে। এক ঘণ্টা পরীক্ষার পুরো সময় মাস্ক পরে থাকতে হবে। মাস্ক পরে আসার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে উল্লেখ করা আছে। তবুও কেউ ভুল করে মাস্ক পরিধান করে না এলে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে মাস্ক সরবরাহেরও ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
সংক্রমিতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কেউ আশঙ্কা করে থাকেন যে, তার মধ্যে করোনা উপসর্গ আছে অথবা কারও মাঝে সংক্রমণ থাকে, তবে আমরা তাদের আলাদাভাবে বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরীক্ষা নেব। এক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো প্রতিটা কেন্দ্রে আইসোলেশন কক্ষের ব্যবস্থা থাকছে। তাপমাত্রা পরিমাপ করে সবাইকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। আশা করছি, সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। সবাই যার যার প্রস্তুতি নিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আজ এমবিবিএস ও ৩০ এপ্রিল বিডিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে।
টিআই/এফআর