সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর এ প্রণোদনার টাকা বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা পাবেন কি-না তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট করা হয়নি। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন দেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা।

সরকার ও বিভিন্ন দপ্তর প্রধানকে কটাক্ষ করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন তারা। বিষয়টি শিক্ষা প্রশাসনের নজরে আসার পর এবার কঠোর সতর্কবার্তা দিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কোনো শিক্ষক এ ধরনের স্ট্যাটাস দিলে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ার দিয়েছে মাউশি।

বুধবার (৫ জুলাই) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সই করা একটি সতর্ক চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ফেসবুক ব্যবহারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি নির্দেশনা দিয়েছে। তারপরও শিক্ষক-কর্মচারীরা তা অনুসরণ না করে সরকারের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা এসব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো। অন্যথায়, এ জাতীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

জানতে চাইলে মাউশির একজন পরিচালক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে কি না সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। এখানে শিক্ষা প্রশাসনের কিছু করার নেই। তারপরও কিছু শিক্ষক বুঝে না বুঝে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন। যা মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। এবার এসব শিক্ষকদের চিহ্নিত করতে কঠোর হতে বাধ্য হচ্ছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারাই এ সংক্রান্ত লেখা দেবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।    

জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে যা বলা হয়েছে 

ক. সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে

খ. জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থি কোনো রকম তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে;

গ. কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন বা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি পরিপন্থি কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এরূপ কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ঘ. জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো সার্ভিস/পেশাকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কোনো পোস্ট দেওয়া হতে বিরত থাকতে হবে;

ঙ. লিঙ্গ বৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা যাবে না;

চ. জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো বিষয় লেখা, অডিও বা ভিডিও ইত্যাদি প্রকাশ বা শেয়ার করা যাবে না

ছ. ভিত্তিহীন, অসত্য ও অশ্লীল তথ্য প্রচার হতে বিরত থাকতে হবে।

সতর্ক বার্তায় যা বলছে মাউশি 

মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি/বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে তাদের ব্যক্তিগত ওয়ালে ও বিভিন্ন গ্রুপে সহকর্মী, প্রতিষ্ঠান প্রধান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে অশোভন, অনৈতিক, শিষ্টাচার বহির্ভূত ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে 'কন্টেন্ট' ও 'ফ্রেন্ড' সিলেকশনে সকলকে সতর্কতা অবলম্বন এবং অপ্রয়োজনীয় ট্যাগ, রেফারেন্স বা শেয়ার করা পরিহার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার বা নিজ একাউন্টের ক্ষতিকারক কন্টেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন এবং সে জন্য প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি/বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যে সব শিক্ষক-কর্মচারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ খুলেছেন, সে সব গ্রুপের সকল গ্রুপ এডমিন-কে গ্রুপে কন্টেন্ট/পোস্ট অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারি আইন/বিধি প্রতিপালনের নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

অন্য কোনো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য সম্বলিত কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড কমেন্ট, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

এ নির্দেশনাটি মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি/বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়মিত মনিটরিং করবেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি/বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন শিক্ষক-কর্মচারী বা কোনো ব্যক্তি কারো কন্টেন্ট/পোস্ট-এ সংক্ষুব্ধ হলে ওই কন্টেন্ট/পোস্ট আপলোডকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রমাণ সহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করবেন।

এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ সব স্তরের পরিপন্থি।

এনএম/এসকেডি