৪৫তম বিসিএস প্রিলির ফল নিয়ে দুশ্চিন্তায় কয়েকশ পরীক্ষার্থী
গতকাল অনুষ্ঠিত ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিলেও ফল প্রকাশ হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঢাকা ও রংপুর অঞ্চলের কয়েকশ শিক্ষার্থী। সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) থেকে পাঠানো হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না নেওয়ায় এ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
আসন বিন্যাসের জটিলতার কারণে এসব শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর নেওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। যদিও সাদা কাগজে তাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছে কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, রংপুর ও ঢাকা অঞ্চলের অন্তত আটটি কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রংপুরের তিনটি পরীক্ষা কেন্দ্রের ১২০ পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এটা হয়েছে। পিএসসি থেকে পাঠানো হাজিরা শিটে তাদের স্বাক্ষর গ্রহণ করতে পারেনি কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবারের মতো ৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে দৈবচয়ন ভিত্তিতে আসন-বিন্যাস করেছে পিএসসি। হাজিরা তালিকায় প্রার্থীর নিবন্ধন নম্বর জোড়-বিজোড় সংখ্যায় ভাগ করে বসানো হয় আসন। পিএসসি নতুন পদ্ধতিতে দেশের প্রতিটি কেন্দ্রের আসন বিন্যাস করে। কিন্তু রংপুর ও ঢাকায় ৮টি কেন্দ্রের আসন বিন্যাস ও আসন বিন্যাসের যে নির্দেশনা বোর্ড আছে সেখানে গরমিল ছিল। ফলে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রগুলোতে এসে সমস্যায় পড়েন।
পরীক্ষার্থীদের কষ্ট বিবেচনা করে আলাদা শ্রেণিকক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় নেওয়া হয় পরীক্ষা। কিন্তু পিএসসির হাজিরা শিটে স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি। এসব কেন্দ্রে কোনো ‘হেল্প ডেস্ক’ ছিল না বলেও জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা।
পিএসসি জানিয়েছে, রংপুরের তিন কেন্দ্র হলো রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ। তবে ঢাকার কেন্দ্রগুলো নাম জানায়নি পিএসসি।
এ ঘটনায় পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। তারা পিএসসির সরবরাহকৃত হাজিরা শিটে স্বাক্ষরের দাবি জানান।
পিএসসি একজন কর্মকর্তা জানান, রংপুরের ঘটনাটি জানার পর তারা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নির্দেশ দেন। এরপর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান ও জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে যান। তারা ঢাকায় যোগাযোগ করে পরীক্ষার্থীদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য পরীক্ষাকেন্দ্রের সদস্য সচিবকে বলেন এবং তা পিএসসির সরবরাহকৃত হাজিরা শিটের সঙ্গে সংযুক্ত করে পিএসসিতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পিএসসির এই কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীতে যেসব কেন্দ্রে হাজিরা খাতায় সমস্যা হয়েছিল সেখানে পিএসসি থেকে সরাসরি আমরা যাই এবং সাদা কাগজে হাজিরার স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পিএসসির পক্ষ থেকে এসব শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যা হবে না বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী একজন পরীক্ষার্থী জানান, তিনি এসে কেন্দ্রের নির্দেশনা বোর্ডের সঙ্গে তার কাছে থাকা পিএসসির আসন বিন্যাসের মিল খুঁজে পাননি। তার সঙ্গে এমন ৪৫ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা আলাদা শ্রেণিকক্ষে বিশেষ ব্যবস্থায় নেওয়া হয়। কিন্তু পিএসসির হাজিরা শিটে স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি।
তিনি ছাড়াও একাধিক পরীক্ষার্থী একই অভিজ্ঞতার কথা জানান।
পরীক্ষার্থীদের এ বিষয়ে দুশ্চিন্তা না করার জন্য বলেছেন পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন। তিনি ঢাকা পোস্টে বলেন, এসব পরীক্ষার্থীদের কোনো অসুবিধা যাতে না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিকভাবে আমাদের জানিয়েছেন যে, আসন বিন্যাসে কোনো ভুল ছিল না। ঢাকায়ও কিছু কেন্দ্র থেকে এমন অভিযোগ এসেছে, পরে দেখা গেছে, আসন বিন্যাস ঠিকই ছিল। কিছু পরীক্ষার্থী তাদের নিকট পাঠানো আসন বিন্যাস গুরুত্বসহ না দেখায় এবং বিলম্বে হলে যাওয়ায় এ সমস্যায় পড়েছে। বিষয়টি কেন হয়েছে আমরা তা খতিয়ে দেখব, যাতে ভবিষ্যতে আর এমন না হয়।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে পিএসসিতে কথা বলে সাদা কাগজে পরীক্ষার্থীরা হাজিরা নেওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এটা নিশ্চিত করেছেন।
এনএম/এসকেডি