‘রোকেয়োর, সাহাত্য, সবখানইে, সমাজার’ এই ভুল শব্দগুলো ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ১১ পৃষ্ঠার ১৫-১৭ নম্বর লাইনে। শুধু এটিই নয়, চলতি শিক্ষাবর্ষ ২০২৩ থেকে চালু হওয়া মাধ্যমিকে ষষ্ঠ এবং সপ্তম দুই শ্রেণির নতুন পাঠ্যবইয়ে প্রায় আড়াইশ ভুল এবং অসঙ্গতি পেয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। 

জানা গেছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু করেছে সরকার। পরীক্ষামূলকভাবে ‘তড়িঘড়ি’ করে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়। এতে নানা ভুল, অসঙ্গতি ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উঠে আসে। এ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি। ওই সময় এনসিটিবি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ এবং ‘বিজ্ঞান অনুশীলন’ পাঠ্যবইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধন করার কথা জানানো হলে পরে দুই শ্রেণির সবকটি বইয়েরই ভুল-অসঙ্গতির সংশোধনী দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় সংস্থাটি।

>>>‘বিশেষ’ চোখেও ধরা পড়ছে না পাঠ্যবইয়ের ভুল

এরপর গত ৩১ জানুয়ারি পাঠ্যবইয়ের ভুল-ত্রুটি সংশোধনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুল হালিমকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ (মূল্যায়ন) কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটি সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

সেই প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চারটি বইয়ে ৫৮টি অসঙ্গতিপূর্ণ লেখা খুঁজে বের করেছে। এই চার বইয়ে ১৮৮টি ভুল-ত্রুটি শনাক্ত করেছে। এখন এসব ভুল সংশোধনী চূড়ান্ত করে  যত দ্রুত সম্ভব সারা দেশের স্কুলপর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন : পাঠ্যপুস্তকে ভুল তথ্যে ভরা ‘রোকেয়া’

এ বিষয় জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম জানান, বিশেষজ্ঞ কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। ঈদের পর স্কুল খোলার আগেই ভুল-ত্রুটি ও অসঙ্গতি সংশোধন করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে পাঠানো হবে। এরপর শ্রেণিশিক্ষকেরা সংশোধিত আকারে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাবেন। আগামী বছর তা পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বিতরণ করা হবে।

পাঠ্যবইয়ে যত ভুল শনাক্ত:
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ২৫টি ভুল ও ১০টি অসঙ্গতি, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ৫০টি ভুল ও চারটি অসঙ্গতি, ষষ্ঠ শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে ৯০টি ভুল ও ৩৫টি অসঙ্গতি এবং একই শ্রেণির ‘বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ’ বইয়ে ২৩টি ভুল ও ৯টি অসঙ্গতি শনাক্ত করা হয়েছে।

ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ১১ পৃষ্ঠার ১৫-১৭ নম্বর লাইনে লেখা হয়েছে ‘রোকেয়োর, সাহাত্য, সবখানইে, সমাজার’। প্রকৃতপক্ষে তা হবে ‘রোকেয়ার, সাহিত্য, সবখানেই, সমাজের’। এ বইয়ের ৩০ পৃষ্ঠার ৫ নম্বর লাইনে শুরুকে লেখা হয়েছে শুরি, ৮৬ পৃষ্ঠার অষ্টম লাইনে নির্দেশনাকে লেখা হয়েছে ‘নির্দেশনাক্ত’, নবম লাইনে শনাক্তকে লেখা হয়েছে ‘সনাক্ত’, ১৫১ পৃষ্ঠার ১৩তম লাইনে ভিন্নকে লেখা হয়েছে ‘ভন্ন’, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৬৬ পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় লাইনে বিশ্লেষণকে লেখা হয়েছে ‘বিশ্লেশন’, ৭০ পৃষ্ঠার ২২, ৩১ ও ৩২ নম্বর লাইনে তাজউদ্দীন আহমদের নাম লেখা হয়েছে ‘তাজউদ্দিন, ৭৬ পৃষ্ঠার ৩৩ নম্বর লাইনে বুদ্ধিজীবীরা-এর জায়গায় লেখা হয়েছে ‘বুদ্ধিজিবীরা’, ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে চতুর্থ পৃষ্ঠার ২১ নম্বর লাইনে জিজ্ঞাসু বা অনুসন্ধিৎসু মনের জায়গায় লেখা হয়েছে ‘বৈজ্ঞানিকমন’ ইত্যাদি।

>>>পাঠ্যবইয়ে কপি : স্বীকার করে জাফর ইকবাল ও হাসিনা খানের বিবৃতি

ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুশীলন) বইয়ের ৮৭ পৃষ্ঠার চাঁদ ও সূর্যের পালা শিরোনামের একটি প্রবন্ধের ৮৮ পৃষ্ঠার লেখা হয়েছে ‘অভিশপ্ত চাঁদ’। এখানে চাঁদকে অভিশপ্ত বলে ‘মনে হয়েছে’। সুপারিশে বলা হয়েছে অভিশপ্ত চাঁদের পরিবর্তে দেওয়া যেতে পারে ‘চাঁদের গল্প’।

ষষ্ঠ শ্রেনির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৮ পৃষ্ঠা ১৩ লাইনে ‘ততদিনে বালক মুজিব পরের জন্য খাটায় উৎসাহ পেয়ে গেছে’ এর পরিবর্তে ‘তত দিনে বালক মুজিব মানুষের জন্য কাজ করার উৎসাহ পেয়ে গেছে’ এবং সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ১১২ পৃষ্ঠায় মুখে গোঁফদাড়ির জঙ্গলের পরিবর্তে ‘মুখে গোঁফদাড়ি’ পড়ানোর সুপারিশ করেছে মূল্যায়ন কমিটি।

এনএম/এমএ