প্রতি বছরই বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ে নানা ধরণের ভুল-অসঙ্গতি চিহ্নিত হচ্ছে। দফায় দফায় দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন করার পরও কেন ভুল হচ্ছে, সেটি খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

জানা গেছে, যেসব ব্যক্তিরা পাঠ্যবইয়ের ভুল তথ্য দিয়ে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গোয়েন্দা সংস্থা আমলনামা সংগ্রহ করবে। 

পাঠ্যবইয়ে বির্তক উঠা বিষয়গুলো পুনরায় বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পর্যালোচনা করে বড় ধরণের পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। সেজন্য গত শনিবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

আরও পড়ুন >>> নতুন শিক্ষাক্রমের সমস্যা কোথায়? 

সূত্রে জানা গেছে, সভার শুরুতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবইয়ে কি কি ধরণের ভুল চিহ্নিত হয়েছে, এগুলো সংশোধনী দেয়া হয়েছে কি না সে বিষয়ে খোঁজ নেন শিক্ষামন্ত্রী।

এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রীকে জানান, এ পর্যন্ত পাঠ্যবইতে যেসব ভুল চিহ্নিত হয়েছে তার সংশোধনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। বইতে আরো ভুল ম্যাসেজ আছে কি না, নাকি মানুষ যেমন বই চাচ্ছে তেমন হয়নি এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণির ও মাধ্যমিকের ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির বইগুলো নতুন করে পর্যালোচনা করতে শিক্ষাবিদের কাছে দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন >>> জিপিএ-৫ তৈরির কারখানা! 

তিনি আরও জানান, নতুন কারিকুলামের অষ্টম শ্রেণির বই কি বর্তমান ধারায় লেখা হবে নাকি পরিবর্তন আনা হবে সেসব পর্যালোচনা করতে আগামী ২ জানুয়ারি আবারো এনসিটিবি’র সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর সভায় বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম বলেন, যেসব ভুল ধরা হচ্ছে সেগুলো আমরা সংশোধন দিয়েছি কি না, কারা এসব করেছে, কাদের জন্য ভুল হয়েছে বা কেনই এমন হচ্ছে সেসব নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। 

মাধ্যমিকের নতুন কারিকুলামের বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন কমিটিতে বামপন্থী শিক্ষক বেশি ছিলেন। তারা তাদের মতো বইয়ের কনটেন্ট তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

তিনি বলেন, পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে কেউ কেউ আদালতে যাচ্ছে। এতে করে লেখকরা অসম্মাানিত হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিজ্ঞ শিক্ষকরা পাঠ্যবই তৈরি করে থাকেন। তাদের সম্মান নষ্ট হলে তারা আর বই লেখার প্রতি আগ্রহী হবেন না। সেটিও আমাদের মাথায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে। সপ্তম শ্রেণির বইতে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তুলে জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা করা হচ্ছে। এখন তাকে (জাফর ইকবাল) নতুন বইয়ের জন্য ডাকলে আসতে চাইবেন না।

আরও পড়ুন >>> শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ 

জানা গেছে, মাধ্যমিকের নতুন কারিকুলামের বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন কমিটিতে বামপন্থী শিক্ষক বেশি ছিলেন। তারা তাদের মতো বইয়ের কনটেন্ট তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে শিক্ষামন্ত্রী নিজেও কিছু ছবি বাতিল করে দিলেও সেটি কার্যকর করা হয়নি। একটিভিটি বই থেকে সেসব ছবি বাতিল করা হলেও রেফারেন্স বইয়ে সেগুলো রাখা হয়েছে। দুটি বই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে। সেসব নিয়ে এখন বির্তক উঠছে। যাদের কাজের জন্য ভুল ভ্রান্তি ও বির্তক উঠছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। এজন্য মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা। যারা এসব বই তৈরিতে কাজ করেছেন তাদের আমলনামা সংগ্রহ করা হচ্ছে। 

এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান বলেন, পাঠ্যবইয়ের অসঙ্গতিগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সেগুলো আমলে নিয়ে নতুন কারিকুলামের বইয়ে আমূল পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেজন্য এ বছরে বির্তক উঠা বইগুলোর পর্যবেক্ষণ কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হবে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক, ক্লাস শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে মতামত নেয়া হবে। দেশের দুই থেকে তিন হাজার স্ট্রেক হোল্ডারদের মতামত নেয়া হবে। যে বিষয়গুলোতে কঠিন, অসঙ্গতি ও ভুল-ভ্রান্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে সেগুলো সংশোধন করা হবে। 

এমএম/এমজে