নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিভ্রান্তি
নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ে অসংখ্য ভুলভ্রান্তি পাওয়া গেছে। এসব ভুল সংশোধনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত কমিটিকে চলতি মাসে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তারা পাঠ্যবই নতুন করে মূল্যায়নের মাধ্যমে ভুল চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধন করবেন। সেই সংশোধনী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
বিভিন্ন পাঠ্যবই পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ এর ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় ও নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটায়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দুটি তথ্যগত ভুল আছে, যেমন-রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প। প্রকৃতপক্ষে রাজারবাগে ছিল পুলিশ লাইনস, আর পিলখানায় ছিল ইপিআর সদর দপ্তর। গত বছরের বইয়েও একই ভুল ছিল।
বিজ্ঞাপন
একই শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ২০০ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ‘১২ ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের নিকট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।’ এ তথ্যটিও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শপথ পড়িয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। পরদিন অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকার সব দৈনিক সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় গুরুত্বের সঙ্গে।
আরও পড়ুন : শিক্ষার্থীদের হাতে নিম্নমানের বই, ৬ মাসেই হবে নষ্ট!
সেদিন জাতীয় দৈনিক পূর্বদেশ-এ প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণ: বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী’। প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানের ছবিসহ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গতকাল বুধবার (১২ জানুয়ারি) অপরাহ্ণে বঙ্গভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাথে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নতুন মন্ত্রিসভার অপর ১১ জন সদস্যও শপথ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।’ ছবিতেও বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে শপথ বাক্য পাঠ করাতে দেখা যায়।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ের ১৮১ পৃষ্ঠায় ‘অবরুদ্ধ বাংলাদেশ ও গণহত্যা’ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘২৬ শে মার্চ থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।’ প্রকৃত তথ্য হলো, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর নির্যাতন, গণহত্যা ও ধ্বংসলীলা শুরু হয় ২৫ মার্চ কালরাতে। একই বইয়ের ২০৩ পৃষ্ঠায় ‘সংবিধানের বৈশিষ্ট্য’ অনুচ্ছেদে এক জায়গায় আছে ‘পঞ্চম ভাগে জাতীয় সংসদ’। এটি হবে ‘পঞ্চম ভাগে আইনসভা’।
আরও পড়ুন : কেউ মেতেছে উৎসবে, কারও মন খারাপ
একই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ের (পৃষ্ঠা-২৫) শুরুর দিকেই একাধিক জায়গায় ‘সময়কাল’ শব্দ উল্লেখ আছে। সময় ও কাল দুটি শব্দ, তবে একই অর্থ। তাই যেকোনো একটি ব্যবহৃত হবে। একই পৃষ্ঠায় এক জায়গায় আছে ‘নদ-নদীগুলো’। ‘নদনদী’ শব্দটিই বহুবচন। আরেক জায়গায় ‘কোনো দেশের’ বদলে ‘কোন দেশের’ ছাপা হয়েছে। এ ছাড়া যতিচিহ্ন কোলনের ব্যবহার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক হয়নি। কোনো কোনো বইয়ে ‘পরিপ্রেক্ষিত’ শব্দের বদলে একই অর্থে ‘প্রেক্ষিত’ ছাপা হয়েছে।
নবম-দশম শ্রেণির ‘পৌরনীতি ও নাগরিকতা’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে (পৃষ্ঠা-১) ‘অংশগ্রহণের’ বদলে ‘অংশগ্রহণের’ ছাপা হয়েছে। ‘ছিল না’র বদলে ছাপা হয়েছে ‘ছিলনা’। এই বইয়েও কোলনের ব্যবহার বেশির ভাগই ভুল। বেশির ভাগ পাঠ্যবইয়েই হাইফেন, ড্যাশ ও কোলনের ব্যবহার যথাযথ হয়নি। এছাড়াও অন্যান্য বইয়ে নানা ধরনের ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যা গত বছরের বইতেও দেখা গেছে।
আরও পড়ুন : নতুন বই হাতে শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস
এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, প্রতি বছর আমাদের চেষ্টা থাকে নির্ভুল পাঠ্যবই তৈরি করা। যেসব ভুল ধরা পড়ছে তা সাথে সাথে ঠিক করা হচ্ছে। বইয়ের মধ্যে আরো কি কি ধরনের ভুল রয়েছে তা জানুয়ারি পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। যেসব ভুল চিহ্নিত হয়েছে ও আরও যেসব পাওয়া যাবে সব ভুল সংশোধন করে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে একটি সংশোধনী দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে।
এমএম/এসকেডি