দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে তারা ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে। এর মধ্যে ১২টিতেই বর্তমান ও সাবেক উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ১৮টির মধ্যে ১৩টির তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে। পাঁচটির এখনও তদন্ত চলছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মে অভিযুক্ত উপাচার্যদের কারণে অন্য উপাচার্যদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে উল্লেখ করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতারা।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাউন্সিল ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। পরিষদের সভাপতি এবং ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা অংশ নেন।

এ সময় শিক্ষামন্ত্রীও অনিয়মের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সব বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের অনিয়ম থেকে বিরত থাকতেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সভা সূত্র জানায়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির তৈরি করা নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন করার প্রস্তাব করেছেন উপাচার্যরা।

সভায় একজন উপাচার্য বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনিয়ম তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এটা করা গেলে অন্যরা সর্তক হবেন।

উপাচার্যরা শিক্ষামন্ত্রীকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বাসাভাড়া কিছুটা কম পান। আবার এসব শিক্ষকদের নির্ধারিত ভাড়ার অর্থের অনেক কম টাকায় বাইরে বাসা ভাড়া পাওয়া যায়। যে কারণে তারা ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক বাসাগুলো খালি থাকছে। সরকারও রাজস্ব পাচ্ছে না।

তারা আরও বলেন, উপাচার্যরা যেকোনো সমস্যায় শিক্ষকদের সহায়তা নেন। জরুরি অবস্থায় হল বন্ধ করা বা অন্য কোনো সমস্যা হলে শিক্ষকদের সমন্বয়ে সমস্যার সমাধান করেন। কিন্তু শিক্ষকরা ক্যাম্পাসে না থাকলে উপাচার্যের একার পক্ষে সব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নয়, সরকারি কলেজেও একই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রীকে আহ্বান জানান তারা।

উপাচার্যরা জানান, তারা দায়িত্বভাতা পান মাত্র দেড় হাজার টাকা। এটা বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া তারা ২০১৫ সাল থেকে পিএইচডির ওপর ইনক্রিমেন্ট দাবি করেন। অধ্যাপকদের একটি অংশকে সিনিয়র সচিবের সমান মর্যাদায় ‘সুপার গ্রেড’ দেওয়ার দাবিও করেন তারা।

বৈঠকে উপাচার্যরা বলেন, বিভিন্ন খাত মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় এবারে ২৫ শতাংশ বাজেট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা আছে। জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বমূল্য, কিন্তু এ খাতে ২৫ শতাংশ ব্যয় কমাতে বলা হয়েছে।

উপাচার্যরা দায়িত্ব পালনে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন তা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে উল্লেখ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অসংগতি ও বৈষম্যগুলো তুলে ধরেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপাচার্যদের সমস্যাগুলো শুনেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।

এএজে/এমএইচএস