করোনার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ফলে প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ শিক্ষার্থী সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছে। যার প্রভাবে বাড়তে পারে স্কুলগুলোতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এমনটাই আশঙ্কা করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে।

স্কুল বন্ধের কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় এর প্রভাব নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের এ সংকট কাটাতে বাংলাদেশ সরকার খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নিয়েছে। গত বছরের এপ্রিলের শুরু থেকেই টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ফোন, অনলাইনসহ নানা মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

তবে আর্থসামাজিক বিবেচনায় স্কুল বন্ধের প্রভাবও ভিন্ন। অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের ওপর স্কুল বন্ধের প্রভাব তুলনামূলক বেশি। করোনার কারণে আয় কমে যাওয়া পরিবারগুলোতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া এসব দরিদ্র পরিবারে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, দেশে ৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৭০ লাখ ছেলেমেয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছে। করোনার প্রভাবে এ সংখ্যার সঙ্গে আরও ৩৫ হাজার ২০০ জন যোগ হতে পারে। জনসংখ্যা বিবেচনায় সংখ্যাটি কম হলেও বিগত কয়েক দশকে শিক্ষায় যে অগ্রগতি হয়েছে, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় সে অর্জন এখন হুমকিতে রয়েছে। বিশেষ করে মেয়ে এবং অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। কারণ দুর্গম, পাহাড়ি, চরাঞ্চলের বহু শিক্ষার্থী স্কুল কার্যক্রমের বাইরে রয়ে গেছে।

এর আগে একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে গণস্বাক্ষরতা অভিযান। তারাও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জরিপ চালিয়ে দেখিয়েছিলো, দীর্ঘ সময় অনলাইন-সংসদ টিভিতে ক্লাস চললেও ডিভাইস ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ৬৮% শিক্ষার্থীর কাছে সে সেবা পৌঁছায়নি। ফলে এ শিক্ষার্থীরা ছিল পুরোপুরি ক্লাস রুমের বাইরে। দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার কারণে এখন ৭৫% শতাংশ শিক্ষার্থী এবং ৭৬% অভিভাবক চাইছেন স্কুলগুলো স্কুলে দেওয়া হোক।

জরিপে দেখানো হয়েছে, দূরশিক্ষণ কার্যক্রমে (সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও ও মোবাইল) শিক্ষার্থীদের ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ অংশ নেয়নি। সমীক্ষার তথ্য বলছে, ৬২ শতাংশের বেশি শিক্ষক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করা দরকার। আর যেসব শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণ প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে, তাদের মধ্যে ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ ডিভাইসের অভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।

গ্রামীণ এলাকায় দূরশিক্ষণ প্রক্রিয়ার বাইরে থাকার হার ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ; অনলাইন ক্লাস আকর্ষণীয় না হওয়ায় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করে না। এদের মধ্যে ৯৯ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে নিজে নিজে পড়ালেখা করেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতামত, যেসব বিষয় পড়ানো হয়নি তা আগে পড়ানো হোক। তবে ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী পরীক্ষা ছাড়া পরবর্তী ক্লাসে প্রোমোশন চেয়েছেন। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় যেসব পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি, তা দিতে চেয়েছেন মাত্র ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।

এনএম/এমএইচএস