লাফিয়ে বাড়ছে সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম
বাজারে তালিকাভুক্তির পর প্রায় প্রতিদিনই সর্বোচ্চ মূল্য বেড়ে লেনদেন হয়েছে বিমা খাতের কোম্পানি সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ার। যে কারণে প্রায় একমাসের ব্যবধানে শেয়ারটির দাম বেড়েছে সাতগুণ। যদিও কোম্পানি বলছে শেয়ারটির দাম এভাবে বাড়ার পেছনে কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য বলছে, ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন শুরু হয় গত ৭ নভেম্বর। ওইদিন শেয়াটির দাম ছিল ১১ টাকা। সেখান থেকে ৬৮ টাকা বেড়ে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) লেনদেন হয়েছে ৭৯ টাকায়। যা অস্বাভাবিক ও কারসাজি হিসেবে দেখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বিজ্ঞাপন
লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আনিসুল হকের অভিযোগ, ‘শেয়ারটিতে কারসাজি হচ্ছে। কারসাজি করে শেয়ারের দাম বাড়ানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিমার সব শেয়ারে কারসাজি হয়েছে, এটিতেও হচ্ছে। এখানে একাধিক চক্র জড়িত।’
নাম না প্রকাশ শর্তে দুটি ব্রোকার হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কয়েকটি হাউজের মাধ্যমে শেয়ারটিতে কারসাজি হচ্ছে। এতে কোম্পানির লোকজনও জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করছি।’ তারা বলছেন, ‘গত এক থেকে দেড় বছরে যারা শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত তাদের কারো বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে কারসাজি বেড়েছে।’
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শেয়ারটিতে যে কারসাজি হচ্ছে তা খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছে।
শেয়ারটির দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে কি না তা কোম্পানির কাছে জানতে রোববার (৫ ডিসেম্বর) চিঠি দেয় ডিএসই। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানিয়েছে, শেয়ার দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সার্ভেইল্যান্স টিম কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে আবু আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশি কিছু বিমা কোম্পানিতে কারসাজি হয়েছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, সার্ভেইল্যান্স সফটওয়ারে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কে কে এই কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। কমিশন ইচ্ছে করলেই ব্যবস্থা নিতে পারে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অযৌক্তিকভাবে শেয়ারের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তবে কেউ যদি আইনের মধ্যে থেকে শেয়ার কেনা-বেচা করেন তাহলে তো আর কিছু বলার থাকে না।
ডিএসইর তথ্য মতে, ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১ কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১৬ কোটি উত্তোলন করে সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স। এরপর গত ৭ নভেম্বর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে একসঙ্গে লেনদেন শুরু হয়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারটির দাম গত ৭ নভেম্বর ছিল ১১ টাকা। সেখান থেকে বিরতিহীনভাবে শেয়ারটির দাম বাড়ছে। ১১ টাকার শেয়ার সোমবার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৭৯ টাকা ২০ পয়সায়।
কোম্পানিটির সর্বশেষ অর্থাৎ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ প্রান্তিক অনুসারে প্রকৃত মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭ হাজার টাকা। তাতে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৭০ পয়সা।
আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানির আয় দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২৮ লাখ ৪ হাজার টাকা। তাতে তিন প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ার প্রতি মুনাফ (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ৪৫ পয়সা। তাতে আইপিও পরবর্তী কোম্পানিটির নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা ৬৪ পয়সা।
কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য বাড়ার বিষয়ে কারণ জানতে চাইলে সচিব ফিরোজ সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাছে শেয়ারের দাম বৃদ্ধির কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তারপরও বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ছে। এটা যারা বেশি দামে কিনছেন তারাই বলতে পারবেন কী কারণে কিনছেন।
এমআই/জেডএস