৯ কোম্পানির শেয়ার কারসাজির তথ্য মিলেছে
প্রাথমিকভাবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯টি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির তথ্য পেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি। এখন অধিকতর তদন্ত চলছে। বিষয়টি নিখুঁতভাবে যাচাই-বাছাই চলছে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শুনানি করা হবে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএসইসির তথ্যমতে, কোম্পানিগুলো হচ্ছে- সিরামিক খাতের ফু-ওয়াং সিরামিক, ওষুধ খাতের বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রকৌশল খাতের আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, বিবিধ খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল ফিড মিল লিমিটেড, বস্ত্র খাতের ঢাকা ডাইং, জ্বালানি খাতের জিবিবি পাওয়ার, খাদ্য খাতের এমারেল্ড অয়েল এবং বিমা খাতের বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ কেন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাড়ল, শেয়ারের দাম বৃদ্ধিতে কারসাজি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা বেশকিছু বিষয় পেয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বলা যাবে কারসাজি হয়েছে কি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, পেপার প্রোসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের ফু-ওয়াং সিরামিক এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বেশি কয়েকটি কোম্পানির কারসাজির তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো অধিকতর যাচাই-বাছাই চলছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গঠিত চার সদস্যের কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিএসইসির পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমানকে। এছাড়া কমিটিতে আছেন বিএসইসির সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট বিভাগের প্রধান মইনুল হক।
গত ছয় মাসে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বৃদ্ধি হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং লিমিটেডের শেয়ার ৯৪ টাকা থেকে ৪৬৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণ জানতে আলাদা দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। কমিটিকে আগামী ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ডিএসইর তথ্যমতে, গত ৪ এপ্রিল আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ারের দাম ছিল ৯৪ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়তে শুরু করে এবং ৩ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৪৬৪ টাকায় দাঁড়ায়।
পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ওভার দ্যা কাউন্টার মার্কেট থেকে ১৭ টাকা মূল্য নিয়ে মূল মার্কেটে আসে। কোম্পানিটির শেয়ার ৯ সেপ্টেম্বর বিক্রি হয়েছে ২৩৫ টাকা ৩০ পয়সা। শেয়ারটির দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছিল না। শুধু কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে।
চলতি বছরের ৪ মে ঢাকা ডাইংয়ের শেয়ারের দাম ছিল ৮ টাকা ৮০ পয়সা। সেখান থেকে ২০ টাকা বেড়ে শেয়ারটি বিক্রি হয়েছে ২৮ টাকা ১০ পয়সায়। একইভাবে ন্যাশনাল ফিড মিলসের শেয়ার ১৬ টাকা থেকে ৪১ টাকা ৯০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। ফুয়াং সিরামিকের শেয়ার ৯ টাকা থেকে বেড়ে ২৭ টাকা ৯০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া বিকন ফার্মার শেয়ার ছয় মাস ছিল ১০৮ টাকা। সেখান থেকে বেড়ে গত ১২ অক্টোবর দাঁড়িয়েছে ২৪৫ টাকায়। জিবিবি পাওয়ারে শেয়ার ২৭ টাকা থেকে বেড়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা ২০ পয়সায়। ১৬ টাকার এমারেল্ড ওয়েলের শেয়ার বিক্রি হয়েছে ৪২ টাকায় এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ১০০ টাকার নিচে থাকা শেয়ার বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকায়।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খালি চোখেই বলে দেওয়া যায় এসব কোম্পানিতে কারসাজি হয়েছে। দ্রুত এসব কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এমআই/এসএসএইচ