ফের সক্রিয় আইটেম চক্র, ঠকছেন বিনিয়োগকারীরা
‘মার্কেটের হট আইটেম বাই করে মাসে ৩০ শতাংশ প্রফিট পেতে ইনবক্স করুন’; ‘নাইমার নতুন আইটেম আনলিমা, যত কমে পারেন বামে বসিয়ে বাই করেন। এখনই টেনে বাই নয়’; ‘আজকের আইটেম ইনডেক্স এগ্রো, অরিয়ন ফার্মা, ইনটার্চ’ এবং ‘আগামী সপ্তাহের নতুন আইটেম যারা কিনতে চান যোগাযোগ করতে পারেন, নতুন আইটেম কিনতে যাচ্ছি’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে এমন সব স্ট্যাটাস দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করছে পুঁজিবাজার নিয়ে কারসাজি করা বেশ কয়েকটি চক্র।
আইটেম দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে চক্রগুলো দিনের পর দিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অতিলোভী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) শেয়ার মার্কেট প্রফিট গেইনার গ্রুপের লিংকন খান নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, ‘সারাজীবনের লস কাভারের বিশেষ অফর: যিনি এই শেয়ারবাজার থেকে কোনোদিন প্রফিট করতে পারেননি বা প্রফিট করলেও ধরে রাখতে পারেননি, তাদের জন্য একটি আইটমে রেড করেছি। মাত্র ১ মাসে ডাবল হবে। যারা সৎ, নীতিবান এবং বিশ্বস্ত, তারা বিস্তারিত শর্তাবলি জানতে ইনবক্স করুন। আশা করি সুযোগটা মিস করবেন না কেউ।’
এর ঠিক তিনদিন আগে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ‘মার্কেটের যেকোনো কন্ডিশনে স্বল্প সময়ে (৭-১০দিন) প্রফিটযোগ্য (২০ শতাংশ) আইটেম পেতে মেম্বার হতে ইনবক্স করুন। সামান্য শর্ত সাপেক্ষে মেম্বার করে নেব।’
আরেকটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন ‘পুঁজিবাজার থেকে প্রফিট করতে কৌশল ও মার্কেট সেন্টিমেন্ট থাকতে হবে। আমার প্রতিটি আইটেমে ৫-৭ কার্যদিবসে প্রফিট পাবেন। মেম্বর হয়ে আইটেম বাই করার সুযোগ নিতে পারেন।’
শেয়ার মার্কেট ইনভেস্টর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নামে আরেক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়, ‘নেক্সট উইক নিউ আইটেম (আগামী সপ্তাহের নতুন আইটেম) যারা কিনতে চান যোগাযোগ করতে পারেন। রিজেন্টটেক্স এবং কেয়া কসমেটিকস এই সপ্তাহে বিক্রি করে নতুন আইটেম কিনতে যাচ্ছি।’
সাকসেসফুল ট্রেড গ্রুপের সদস্য শাহরিয়ার গত মঙ্গলবার (৬ জুলাই) চারটি আইটেমের নাম পোস্ট করেন। এগুলো হচ্ছে- জাহিন স্পিনিং, সায়হাম কটন, সেন্ট্রাল ফার্মা এবং পেনিনসুলা। এরপর বুধবার (৭ জুলাই) পোস্ট করেন, আজকের আইটেম- এবিবি ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড, জিএসপি ফাইন্যান্স এবং ইসলামিক ফাইন্যান্স। পরের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) পোস্ট করেন- ইনডেক্স এগ্রো, অরিয়ন ফার্মা এবং ইনটার্চ।
ডিএসই প্রফিট ক্লাব নিউ গ্রুপের সদস্য নাইমা ফারহানা ২৪ জুন পোস্ট করেছেন, ‘নাইমার নতুন আইটেম আনলিমা যত কমে বসিয়ে বাই করেন। এখনই টেনে বাই নয়।’ তার আগে গত ১১ জুন লিখেন ‘যারা নাইমার সাফকো (safkospinn) আর এনপলিমারের (npolymar) পেছনে লেগেছিল তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। তার কি চুপিচুপি কিনে বসে আছে? তার আগের দিন লেখেন নাইমার npolymar কেমন এনজয় করছেন?
এভাবে দিনের পর দিন স্ট্যাটাস দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করছে চক্রগুলো।
হৃদয় হাসান নামের এক বিনিয়োগকারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ডিএসই প্রফিট ক্লাবের সদস্য নাইমার স্ট্যাটাস দেখে শেয়ার কিনেছি। এরপর পর থেকে শেয়ারটির দাম কমতে শুরু করে। এখন আমি সাফকোর শেয়ারের চার টাকা করে লোকসানে আছি। এরা মাল যখন বিক্রির সময় আসে কখন এ রকম স্ট্যাটাস দিয়ে বিক্রি করে বেরিয়ে চলে যায়। আর তাদের স্ট্যাটাসের ফাঁদে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
লিংকন খানের স্ট্যাটাসের কমেন্ট করে আইপিডিসি ব্রোকার হাউজের বিনিয়োগকারী জসিম পাটোয়ারী বলেন, আর কত বোকা বানাবেন। আপনি তো দুই মাস আগে রবির শেয়ার কিনতে বলেছিলেন। দাম ১৫০ টাকা হবে বলেছিলেন। এখন রবির শেয়ারের দাম কত? সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েন না।
এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি চক্র ডিএসইর নামে ফেসবুক পেইজ খুলে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করত। ভুয়া আইডিগুলো বন্ধ করেছি। এখন আর ডিএসইর নামে কোনো ফেসবুক আইডি নেই। বিনিয়োগকারীদের উচিত এসবের ফাঁদে পা না দিয়ে, নিজের বুদ্ধিতে জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করা।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা বলেন, শুধু ফেসবুকই নয়, হোয়াটস অ্যাপ এবং ভাইবারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজারে প্যানিক সৃষ্টি করছে বিভিন্ন চক্র।
তিনি বলেন, তারা কোম্পানি জানেন না, কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তারপর ভুয়া মূল্য সংবেদনশীল ছড়িয়ে ম্যানুপুলেট করছেন। তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া উচিত।
বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টির বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজার থেকে ফায়দা নিচ্ছে বিভিন্ন চক্র। এগুলোর মাধ্যমে তারা পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের ধরতে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে ৩-৪শ আইডি চিহ্নিত করেছি। কিছুদিন ফেসবুকে গুজব ছাড়ানোটা কম ছিল। নতুন করে বাড়তে থাকলে এগুলো আমরা আবার দেখব।
এমআই/এমএইচএস