ডিএসই টাওয়ার

আরও ৩০টি ব্যবসায়ী গ্রুপকে ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে শেয়ার কেনা-বেচার ব্যবসা করার অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। শেয়ার কেনা-বেচার এই লাইসেন্সটিকে বলা হয়- ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক)।

এর ফলে নতুন করে অন্তত তিনশ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। তাতে পুঁজিবাজারে বাড়বে লেনদেন ও গভীরতা। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আগামী দুই বছরের মধ্যে বাজারে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ তিন থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনার আলোকে ডিএসই কর্তৃপক্ষ নতুন ব্রোকার হাউজ অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নতুন ট্রেক অনুমোদন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন ট্রেক অনুমোদনের ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়বে। কারণ তারাও ব্যবসা করবে, ব্যবসা করলে নতুন নতুন ফান্ড বাজারে আনতে হবে। নতুন নতুন ফান্ড আসলে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়বে।

তার কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘদিন পর কমিশন নতুন করে ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে ব্রোকার ব্যবসার লাইসেন্স দিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক প্রেসিডেন্টসহ ছয় জন সদস্যও।

তিনি বলেন, নতুন ব্রোকার হাউজ আসছে, তাতে একদিকে পুঁজিবাজারে লেনদেন বাড়বে। অন্যদিকে দেশ-বিদেশে পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়বে।

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন ট্রেক অনুমোদন পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। তাতে নতুন করে বিনিয়োগকারী ও বিনিয়োগ বাড়বে। তবে কমিশন ও স্টক এক্সচেঞ্জকে ব্রোকার হাউজে আরও বেশি করে মনিটরিং করতে হবে। কারণ বেশি ব্রোকার হাউজ হওয়ায় শৃঙ্খলায় বজায় রাখাও জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুন ট্রেক অনুমোদনে পুরাতন ব্রোকার মালিকরা ক্ষমতা হারাবেন বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে শেয়ার ব্যবসার জন্য নতুন করে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ক্রীড়াবিদ, শিল্পগোষ্ঠী, ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্রোকার ব্যবসার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।

এর ফলে ডিএসইর মোট ব্রোকার হাউজের সংখ্যা দাঁড়াল ২৮০টিতে। ১৯৫২ সালে ডিএসইর কার্যক্রম শুরুর পর ২০০৪–২০০৫ সময়ে একসঙ্গে ৩৮টি ট্রেক বিক্রি করেছিল ডিএসই। তার প্রায় ১৫ বছর পর নতুন করে ৩০টি ট্রেক বিক্রি করলো দেশের প্রধান পুঁজিবাজার।

নতুন করে ব্রোকার হাউজের লাইসেন্স পাওয়া স্নিগ্ধা ইক্যুইটিজের মালিক অর্থাৎ চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন হাজারী। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম।

ট্রাইস্টার সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী এমপি। ব্যবস্থাপনা পরিচালক পোশাক খাতের ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান মৃধা।

সেলেসটিয়াল সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছে নেত্রকোনার এমপি মানু মজুমদার। তিনবারের এমপি ও আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের ছেলে ও মেঘনা ব্যাংকের উদ্যোক্তা রাশেক রহমানের মালিকানাধীন ট্রেড এক্স সিকিউরিটিজ।

বিএমবিএ প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান

খেলোয়াড় তালিকায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মোনার্ক হোল্ডিংসকে। এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বিএসইসির বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের শুভেচ্ছাদূত ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন কাজী সাদিয়া হাসান।

ব্যবসায়ীদের তালিকায় অনুমোদন হয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়া সিকিউরিটিজ, টি কে গ্রুপের টি কে শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেনের মালিকানাধীন মীর সিকিউরিটিজ, জাজ ভূঁইয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান ভূঁইয়ার মালিকানাধীন মাহিদ সিকিউরিটিজ, বারাকা পাওয়ারের মালিকানাধীন বারাকা সিকিউরিটিজ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেএমআই সিরিঞ্জের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান জেএমআই গ্রুপের এমডি আবদুর রাজ্জাকের থ্রিআই সিকিউরিটিজ।

চট্টগ্রামভিত্তিক কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানসহ গ্রুপের একাধিক শীর্ষ ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান কেডিএস শেয়ারস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, পুঁজিবাজারের সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সাবেক কর্মকর্তা মাশরিব জাহিদের মালিকানাধীন এসএফআইএল সিকিউরিটিজ।

এছাড়া সিএসইর সাবেক সভাপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ একটি ব্রোকার হাউজের অনুমোদন পেয়েছেন। সিএসইর সদস্য প্রতিষ্ঠান কবীর সিকিউরিটিজ ছাড়াও চারজন আরএকে ক্যাপিটাল ও প্রুডেনশিয়াল ক্যাপিটালসহ মোট ছয়টি ব্রোকার হাউজের অনুমোদন পেয়েছেন।

এর বাইরে যমুনা ব্যাংকের যমুনা সিকিউরিটিজ, আল হারামাইন গ্রুপের আল হারামাইন সিকিউরিটিজ, এনআরবি ব্যাংক সিকিউরিটিজ, সাউথ বাংলা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, বিমা খাতের কোম্পানি তাকাফুল ইসলামী সিকিউরিটিজ ও অগ্রণী ইনস্যুরেন্স সিকিউরিটিজ, বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বারাকা পাওয়ারের বারাকা সিকিউরিটিজ অনুমোদন পেয়েছে।

নিয়ম নীতি অনুসারে, ট্রেক ইস্যুতে একেকটি প্রতিষ্ঠানকে জামানত হিসেবে তিন কোটি টাকা ও নিবন্ধন ফি হিসেবে এক কোটি টাকা জমা দিতে হবে। আর দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হতে হবে পাঁচ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ কোটি টাকার মধ্যেই একেকটি ট্রেকের অনুমোদন পাওয়া যাবে।

এমআই/এসএসএইচ