গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতির যতটা উন্নতি হয়েছে, তার কোনো প্রতিফলন বাজারে নেই বলে জানিয়েছেন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকার মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মন্দাবস্থার কারণে একটি প্রজন্ম শেয়ারবাজার বিমুখ হয়ে গেছে। এ কারণে শেয়ারবাজারে নতুন কোনো বিনিয়োগকারী আসছেন না। অন্যদিকে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (১১ জুন) মতিঝিলে ডিএসই ভবনে ডিবিএ কার্যালয়ে আয়োজিত বাজেট-উত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

৪০ বছরের পুরনো একটি ব্রোকারেজ হাউসের তথ্য তুলে ধরে সাইফুল ইসলাম বলেন বলেন, গত পাঁচ মাসে ওই ব্রোকারেজ হাউসে মাত্র ২৪ থেকে ২৫টি নতুন বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খোলা হয়েছে। অথচ একটি সময় বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে দিনে শতাধিক বিও হিসাব খোলা হতো। ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া ভালো কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসেনি। এছাড়া বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিরও ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে বাজারের প্রতি একটি প্রজন্ম আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার নিয়ে নতুন করে কোনো গণজাগরণ তৈরি করতে না পারলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই শেয়ারবাজার ধুঁকছে। এ অবস্থায় বাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফেরাতে হলে নীতি সহায়তা দরকার। তাই আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে কিছু নীতি সহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু নীতি সহায়তার বদলে মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর নতুন করে করারোপ করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে; যার ফলে বাজেটের পর বাজারে টানা পতন চলছে।

ডিবিএ সভাপতি বলেন, আমরা মূলধনি মুনাফার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু বাজারের যে পরিস্থিতি, এখন মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপের সময় নয়। তাই আমরা এ সিদ্ধান্ত এক বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই। পাশাপাশি কীভাবে সহজে মূলধনি মুনাফার ওপর থেকে কর কাটা হবে, তার একটি পথনকশা আশা করছি। বর্তমানে যে বিধান করা হয়েছে, তাতে উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে এই করহার গিয়ে দাঁড়াবে ৪১ শতাংশের বেশি। এতো কর দিয়ে কোনো সম্পদশালী শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবেন না। এছাড়া মূলধনি লোকসান সমন্বয়ের বিষয়ে সুস্পষ্ট ও কার্যকর ব্যাখ্যা দরকার। বাজেটে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ৮ দফা দাবি জানায় সংগঠনটি। দাবিগুলো হচ্ছে— ব্রোকারেজ হাউজের রাজস্ব করহার ০.০৫ থেকে ০.০২৫ শতাংশ করা; কর্পোরেট আয়করকে ব্রোকারেজের জন্য চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা; ব্যক্তি শ্রেণির সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশের ঊর্ধ্বে অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করহার নির্ধারণ করা; নিয়মিত এবং সম্পূর্ণ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের শর্তে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করহার হ্রাস করা; নতুন বিও আইডিগুলোকে ৩ বছরের জন্য করমুক্ত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া; সব নতুন বিও অ্যাকাউন্টগুলোকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগের সীমা সাপেক্ষে ৩ বছর পর্যন্ত সময়কালের জন্য কর বহির্ভূত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া; শিক্ষার্থী, সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী এবং প্রবীণ নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত বিও হিসাবধারীদের লাভের জন্য শূন্য হারে কর উপভোগ করার অনুমতি দেওয়া এবং মার্জিন লসকে করছাড় যোগ্য হিসেবে অনুমতি দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিবিএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সাইফউদ্দিন, সহসভাপতি ওমর হায়দার খান, পরিচালক দস্তগীর মো. আদিল, মফিজউদ্দিন, সুমন দাশ প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি