পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দশটি ব্যাংক মিলে গঠিত হচ্ছে একটি ‘ডিজিটাল ব্যাংক’। ব্যাংকটির নাম রাখা হচ্ছে ‘ডিজি ১০ ব্যাংক পিএলসি’।

বুধবার (৯ আগস্ট) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসইর তথ্যমতে, ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন হবে ন্যূনতম ১২৫ কোটি টাকা। নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং লেনদেনকে আরও সহজতর করতেই বেসরকারি খাতের দশটি ব্যাংকে মিলে এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছে।

ব্যাংকগুলো হলো- দ্যা সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি), ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড। অর্থাৎ এই দশটি ব্যাংক হলো ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা।

ব্যাংক দশটির মধ্যে বুধবার সিটি ব্যাংক মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে। ডিজিটাল ব্যাংকটিতে সিটি ব্যাংক বিনিয়োগ করবে পরিশোধিত মূলধনের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ এই ব্যাংকে সিটি ব্যাংকের শেয়ার থাকবে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে ১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

অপরদিকে বুধবার (৯ আগস্ট) পর্ষদ সভায় এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডও প্রস্তাবিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা বৃহস্পতিবার ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। বাকি ৮টি ব্যাংকও দ্রুত সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করবে।

১২৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহসহ বাকি সকল কার্যক্রম গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। বর্তমানে প্রচলিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন থাকতে হয় ন্যূনতম ৫০০ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে গত জুন মাসে সার্কুলার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১ আগস্ট আবেদনের শেষ তারিখেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন সময়ই দশ ব্যাংকের এই উদ্যোগের কথা জানা গেল।

দশ ব্যাংক মিলে দীর্ঘমেয়াদি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে বিনিয়োগ বাংলাদেশে এই প্রথম। গত জুন মাসে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে অনলাইনে আবেদন নিতে ওয়েবপোর্টাল চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সেখানে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় অন্যান্য শর্তের মধ্যে উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ১২৫ কোটি টাকা ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন থাকার কথা বলা হয়। যেখানে প্রচলিত ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।

উদ্যোক্তো হতে চাইলে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ধারণ থাকতে হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ সর্বশেষ সংশোধনী (২০২৩) এর ১৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্য বা প্রতিষ্ঠান, একক বা যৌথভাবে কোনো ব্যাংকের মোট শেয়ারের ১০ শতাংশের বেশি ক্রয় করতে পারবে না।

ডিজিটাল ব্যাংকের মালিকানার বেলায়ও ব্যাংক কোম্পানি আইন প্রযোজ্য হওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের ৫ শতাংশের বেশি মালিকানা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের ব্যবসা শুরুর পর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৫ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে, আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ উদ্যোক্তাদের সরবরাহ করা প্রাথমিক মূলধনের কম হতে পারবে না।

অর্থাৎ আইপিওর মাধ্যমে কমপক্ষে ১২৫ কোটি টাকা বা ওই সময়ে উদ্যোক্তাদের সরবরাহকৃত অর্থের সমপরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করতে শেয়ার ছাড়তে হবে পুঁজিবাজারে।

উদ্যোক্তাদের শেয়ার তিন বছরের আগে হস্তান্তর করতে অনুমোদন দিতে পারবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

এমআই/এমজে