পুঁজিবাজারে কমেছে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও
পুঁজিবাজারে গত এক বছরে নারী বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে। শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সিডিবিএলের তথ্য মতে, ২০২২ সালের ৮ আগস্ট পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ২০ হাজার ১৫৭টি। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৪৯টি। আর নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫০৮টি।
বিজ্ঞাপন
এক বছর পর ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সার্বিক বিও হিসাবে তেমন কোনো হেরফের না হলেও, কমেছে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও। এক বছরের ব্যবধানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব প্রায় ২৭ হাজার কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২২ হাজার ৫১৬টি। তবে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়ে যাওয়ায় মোট সংখ্যায় তেনে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
এ বিষয়ে মডার্ন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিন মুন্নি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজারে যেসব বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার বেশিরভাগ পরিচালনা করেন পুরুষরা। একজন পুরুষ বিনিয়োগকারী তার স্ত্রী, মা এবং বোনের বিও অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছেন। হয়তো দেখা যাবে যে এসব অ্যাকাউন্টের বিষয়ে ওই ব্যক্তির স্ত্রী, মা, বোনও জানে না। ফলে বিও অ্যাকাউন্টের চিত্রের যে তথ্য রয়েছে তা নারী বিনিয়োগকারীদের প্রকৃত চিত্র নয়। প্রকৃত চিত্রে সে সংখ্যা আরো কম।
অন্যদিকে বাজারে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়ছে উল্লেখ করে মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নারী বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ঝামেলাও কম হয়। আমরা ব্রোকার হাউজগুলোতে নারী বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা এবং কর্মপরিবেশ দুটো দিকেই খেয়াল রাখছি।
পুঁজিবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে যত উদ্যোগ
বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে পুঁজিবাজারের পরিচালনা পর্ষদে নারীদের একজন সদস্য রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে একজন নারী পরিচালক রয়েছেন। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চার সদস্যের মধ্যে একজন রয়েছেন নারী সদস্য অর্থাৎ কমিশনার।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বর্তমানে ৩৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে ১০ শতাংশই নারী। ডিএসইতে নারীদের কর্মকর্তা-কর্মচারী বাড়াতে কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে নারী উদ্যোক্তা বাড়াতে বেশ কিছু সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতেও সচেতনতামূলক প্রোগাম করা হয়েছে। লিস্টেড কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নারী পরিচালক রয়েছে কি না এ বিষয়ে তদারকি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেই। নারীদের জন্য কাজের সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছি।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে নারী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী বাড়াতে প্রতি বছর একাধিক প্রোগ্রাম করে থাকি, এবছরও সেগুলো করেছি। আশা করছি ব্রোকার হাউজগুলো বিষয়টি গুরুত্ব দেবে।
সার্বিক বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজারে নারী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এবছরও পুঁজিবাজারে নারী শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিএসই, সিএসই এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি পরিচালনা পর্ষদে নারী পরিচালক রাখা হয়েছে। ব্রোকার হাউজগুলোকে নারীদের পুঁজিবাজারে আগ্রহী করতে বিশেষ সেমিনার ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে নারীদের আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করছি।
এমআই/জেডএস