পুঁজিবাজারের স্বাস্থ্য ভালো হলে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে
পুঁজিবাজারের স্বাস্থ্য ভালো হলে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইজের কারণে বর্তমানে লেনদেন কম হচ্ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার কারণে ফ্লোর প্রাইজের ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেনি, বরং ভালো অবস্থানে রয়েছে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিএসইসির সম্মেলন কক্ষে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশন্সের (আইওএসকো) এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির (এপিআরসি) দুই দিনব্যাপী সম্মেলন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, মাহবুব আলম উপস্থিত ছিলেন।
দেশে প্রথমবারের মতো বিশ্ব পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংগঠন আইওএসকো এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির (এপিআরসি) সভা রাজধানীর শেরাটন হোটেলে আগামী (২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি) সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম জানান, পুঁজিবাজার অটোমেশন হলে অনেক জালিয়াতি ও কারসাজি কমে আসবে।
বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, গোটা বিশ্বে শেয়ারবাজারে মেনিপুলেশন (কারসাজি) হয়, কারসাজি একেবারে বন্ধ হবে সেটা বলা যাবে না। কারণ কারসাজির এক পথ বন্ধ করলে আরও নতুন নতুন কৌশল বের করে কারসাজি করে তারা।
তিনি বলেন, নতুন নতুন কৌশলে কারসাজি চক্রটি ধরতেই অটোমেশন করা হচ্ছে। যাতে কারসাজির শুরুতে তাদের চিহ্নিত করা যায়, আইনের আওতায় নিয়ে এসে তাদের শাস্তি দেওয়া যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুর রহমান বলেন, এনফোর্সমেন্ট বিভাগ কারসাজি চক্রকে শাস্তি দিচ্ছে। তাদের শাস্তি যেন আরও বেশি হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হচ্ছে, আইনকে আরও পুঁজিবাজার উপযোগী করা হচ্ছে।
সমাপনী বক্তব্যে রেজাউল করিম জানান, এপিআরসির সভায় পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা, আইন এবং অন্যান্য দেশের কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশ সেখান থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, গত দুই বছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও জরিমানা করা হয়েছে তা অন্যান্য বাজারের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা পুঁজিবাজারে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুপারভাইজরি ডাইরেক্টর মিটিংয়ের মাধ্যমে সভা শুরু হবে। আর দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। এ দুটি সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) এবং আইওএসকোর এপিআরসি ভাইস চেয়ার অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য এপিআরসি প্ল্যানারি সভার মাধ্যমে সভা শেষ হবে।
সভায় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নেপালসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া এ সভায় সারা বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠান আইওএসকোর সচিবালয়, স্পেনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
সভায় এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন-কানুন, বিধিমালা, চলমান পরিস্থিতি, ঝুঁকি, সমস্যা ও তা থেকে উত্তরণের উপায়সহ পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নতির বিষয়ে আলোচনা হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সভা আয়োজনের মাধ্যমে দেশ এবং দেশের পুঁজিবাজার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও পরিচিত হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও আস্থা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারের নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সংশ্লিষ্ট আইনকানুনের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নতিতে এই সভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এমআই/এসএসএইচ/