পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে প্রায় ১৪ কোটি টাকা (রিয়েলাইজড গেইন) তুলে নিয়েছে বহুল আলোচিত আবুল খায়ের হিরো চক্র। এছাড়াও প্রায় ২৫ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার টাকা আন রিয়েলাইজ গেইন রয়েছে চক্রটির।

এই কারসাজি দায়ে আবুল খায়ের হিরো ও তার গংদের মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসি।

বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গত সপ্তাহে হিরো এবং তার সহযোগীদের এই শাস্তি দেওয়া হয়। জরিমানার অর্থ আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে বিএসইসির ইস্যুকৃত ব্যাংক ড্রাফট/পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা প্রদান করতে বলা হয়েছ। তা না হলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএসইসির সূত্র মতে, ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে আবুল খায়ের হিরো গংরা চলতি বছরের ২৯ মার্চ থেকে ২৪ এপ্রিল সময়ে আইপিডিসির শেয়ার কারসাজির করেছেন। তারা 'সিরিয়াল ট্রেডিং' বা 'সিরিজ লেনদেন' মাধ্যমে ৩৪ টাকার শেয়ার ৫৪ টাকা ৭০ পয়সা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন। যা শতাংশের হিসেবে ৬০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৮ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠান মিলে অবৈধ উপায়ে মুনাফা তুলে নিয়েছেন। এভাবে শেয়ারের মূল্য প্রভাবিত করা আইনত নিষিদ্ধ।

হিরো কারসাজির সহযোগীরা হলেন, আবুল খায়ের হিরোর স্ত্রী কাজি সাদিয়া হাসান, তার বাবা আবুল কালাম মাতবর, তার বোন কনিকা আফরোজ, তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল কো-অপারেটিভ, হিরোর শ্যালক কাজী ফুয়াদ হাসান, তার ভাই সজিব মাতবর প্রমুখ।

৯ জনের চক্রটি এক মাসে ১৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৭ টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছে। এছাড়াও তাদের আন রিয়েলাইজ গেইন ২৫ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার ৮৪ টাকা। অর্থাৎ কারসাজির মাধ্যমে মুনাফা করেছে ৩৯ কোটি টাকার বেশি।

প্রতিবেদন বলা হয়, আবুল খায়ের হিরো ও তার সহযোগীরা মুনাফা তুলে নিয়েছে ৬ কোটি ৬১ লাখ। তাদের হাতে ওই সময় আন রিয়েলাইজ গেইন ছিল ১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়, আবুল খায়ের নিজে মুনাফা করেছেন ২ কোটি ২৪ লাখ ২ হাজার ৯৯৫ টাকা। তার আন রিয়েলাইজ গেইন রয়েছে ২ কোটি ৩ লাখ টাকা। তার স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানের আন রিয়েলাইজ গেইন দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিরোর বাবা আবুল কালাম মাতবর ৪ কোটি ১১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা মুনাফা তুলে নিয়েছেন। তার আন রিয়েলাইজ গেইন রয়েছে ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

এছাড়াও মোহাম্মদ বাসার ৫০ লাখ ৪২ হাজার, ডিআইটি কো-অপারেটিভ ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, কাজী ফুয়াদ হাসান ৩ হাজার ৪৩৪ টাকা, সাজিদ মাতবর ২৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং আয়েশা বেগম কারসাজির মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯২৮ টাকা মোট ১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা মুনাফা করে তুলে নিয়েছেন। নগদের পাশাপাশি তাদেরও আন রিয়েলাইজ গেইন রয়েছে।

বিএসইসির নিয়ম ভঙ্গের দায়ে, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জনস্বার্থে আবুল খায়ের এবং তার সহযোগীদের ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার অর্থদণ্ড ধার্য করে কমিশন।   

এমআই/এসকেডি