পুঁজিবাজারে সরকারি ৩ লাখ কোটি টাকার বন্ডের লেনদেন শুরু
দেশের পুঁজিবাজারে প্রথমবারের মতো ২৫০টি সরকারি সিকিউরিটিজ বা ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে। যার বাজার মূলধন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা।
সোমবার (১০অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একসঙ্গে এ লেনদেনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার-বন্ড কেনা বেচা করতে পরছেন। এর ফলে দেশের জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদানও এক ধাক্কায় ১৪ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
তবে লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টায় অর্থাৎ সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময়ে একটি বন্ডেরও কেনা-বেচা হয়নি।
এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পর এবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন শুরু হয়েছে। এখানে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা বন্ড কেনা-বেচা করতে পারবেন। যা পুঁজিবাজারে ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়।
তিনি বলেন, ডিএসইতে বন্ডগুলোর লেনদেনের ফলে এর বাজার মূলধন ৫ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার থেকে বেড়ে ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ১৩-১৪ থেকে শতাংশ বেড়ে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
লেনদেনের প্রথম দিকে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কম থাকলেও ধীরে ধীরে শেয়ারের চেয়ে বন্ড মার্কেট বেশি জনপ্রিয় হবে বলেও জানান তিনি।
একই কথা বলেছেন সিএসইর ভারপ্রাপ্ত এমডি গোলাম ফারুক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুঁজিবাজারে বৈচিত্র্য আনতে এবার সরকারি প্রতিষ্ঠানের বন্ডগুলোর লেনদেন শুরু হয়েছে। এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ইচ্ছে করলেই সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড কেনা-বেচার মাধ্যমে মুনাফা করতে পারবেন। এটা আমাদের বহুদিনের প্রত্যাশা ছিল।
এ বিষয়ে বিএসইসির এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, পুঁজিবাজারের দুটি পার্ট। এর মধ্যে একটি ইক্যুইটি মার্কেট, আরেকটি ডেপথ মার্কেট। ইক্যুইটি মার্কেটই হলো শেয়ার মার্কেট। বাংলাদেশে এই শেয়ার মার্কেটই উন্নয়ন করেছে। শেয়ার মার্কেটের আরেকটা অংশ যেটা আসলে বড় হওয়া উচিত সেটা হলো বন্ড মার্কেট। সেটা কিন্তু খুব বেশি গড়ে ওঠেনি। সেকারণে সেকেন্ডারি মার্কেট আসলে ততটা ভালো কাজ করছে না। বন্ড মার্কেটকে বড় করতে যে সাপোর্ট দরকার সেটা গভর্নর হওয়ার পর বেশি অনুভব করলাম।
গভর্নর বলেন, আমাদের অনেক ব্যাংক টায়ার-২ বন্ড ইস্যু করছে। সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড। আমি যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রেন্ড ছিল এক ব্যাংক বন্ড ইস্যু করলে আরেক ব্যাংককে তা নিতে হতো। আমি যোগ দেওয়ার পর নিয়ম করে দিয়েছি ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড বাইরে বিক্রি করতে হবে। ব্যাংকের বন্ড তো সব সিকিউরড বন্ড। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক ফল্ট করেনি। আগামী ৫০ বছরেও ফল্ট করবে না বলে আমি মনে করি। তাহলে সব বন্ড সিকিউরড। তারা কেন মার্কেটে আসবে না। সেটা কেন সাধারণ মানুষ কিনবে না। আমার কাছে এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬টি ব্যাংক এসেছে। সবাইকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি যে ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড ক্যাপিটাল মার্কেটে ইস্যু করতে হবে। আমরা পুঁজিবাজারে বন্ডগুলোকে বড় করার চেষ্টা করছি।
এদিকে উদ্যোগটি পুঁজিবাজারে জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তারা বন্ড ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিতে পারবেন। এতে ব্যাংকের ওপর ঋণের চাপ কমবে।
ট্রেজারি বন্ড কী, বিনিয়োগকারীরা কী পাবেন
ট্রেজারি বন্ড হলো সরকারি বিল বা বন্ড, যা একটি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। যার মেয়াদ ন্যূনতম দুই বছর থেকে ২০ বছর। এই বন্ডের মাধ্যমে সরকার পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। এখানে বিনিয়োগ করলে টাকা হারানোর কোনো ঝুঁকি থাকবে না। বরং বছরে ৭ থেকে ৯ শতাংশ সুদ বা মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি পাবেন কর রেয়াত।
এতদিন এই বন্ড বিনিয়োগকারীরা কেনা-বেচা করতে পারতেন না পুঁজিবাজারে। শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকে কেনা-বেচা হতো। জনপ্রিয়তাও ছিল না। বন্ড মার্কেটে যাতে সব বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে এর লেনদেন শুরু হচ্ছে।
কারা কীভাবে বিনিয়োগ করতে পারবেন
‘এ’ ক্যাটাগরিতে পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে বন্ডগুলো। উদ্বোধনের দিন লেনদেন হবে ২৫০টি বন্ডের, যার বাজার মূল্য ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এই ট্রেজারি বন্ডে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। তার জন্য নতুন করে কোনো বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে না। তবে বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ বন্ডের ইউনিটের ফেসভ্যালু হবে ১০০ টাকা। লট হবে দশ হাজারটি। সরকারি ট্রেজারি বন্ডগুলোর মেয়াদ হবে যথাক্রম ২ বছর, ৫ বছর, ১০ বছর, ১৫ বছর এবং ২০ বছর।
এমআই/এমএইচএস