বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আমরা চাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে মানুষ পুঁজিবাজারে আসুক। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করুক, এখানে মুনাফা বেশি।

সোমবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কার্যালয়ে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

বিএসইসি অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

তিনি বলেন, একটা রেগুলেটরের যে কাজ, সেই কাজটি আমরা করছি। রেগুলেটর হিসেবে পুঁজিবাজারকে আমরা সহায়তা করে যাচ্ছি।

গভর্নর বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে আমরা সুদহার কমিয়েছি। বিভিন্ন শর্ত দিয়েছি। সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগের বিধান করেছি। এতকিছু করেছি যাতে মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কম করে। 

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। এই ঋণ হওয়ার অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ব্যাংকগুলো যে ডিপোজিট জমা নেয় এটা স্বল্পমেয়াদি ডিপোজিট নেয়। ব্যাংক স্বল্প মেয়াদের আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করে। সুতরাং এখানে একটা ম্যাচিউরিটি সমস্যা আছে। স্বল্পমেয়াদের আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করছে। যখন এটা ফেরত দেওয়ার কথা তখন ফেরত দিতে পারছে না।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের দুটি পার্ট। এর মধ্যে একটি ইক্যুইটি মার্কেট, আরেকটি ডেপথ মার্কেট। ইক্যুইটি মার্কেটই হলো শেয়ার মার্কেট। বাংলাদেশে এই শেয়ার মার্কেটই উন্নয়ন করেছে। শেয়ার মার্কেটের আরেকটা অংশ যেটা আসলে বড় হওয়া উচিত সেটা হলো বন্ড মার্কেট। সেটা কিন্তু খুব বেশি গড়ে ওঠেনি। সে কারণে সেকেন্ডারি মার্কেট আসলে ততটা ভালো কাজ করছে না। বন্ড মার্কেটকে বড় করতে যে সাপোর্ট দরকার সেটা গভর্নর হওয়ার পর বেশি অনুভব করলাম।

গভর্নর বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন- ভারত, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় উদ্যোক্তা ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে পুঁজি তোলে। অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে লোন নেয়। আর আমাদের দেশে হচ্ছে ঠিক এর উল্টো। সবাই ব্যাংক থেকেই লোন নিচ্ছে। কাজেই এখানে যদি লোন পরিশোধে কোয়ার্টার মিস করেন তাহলেই তিনি ডিফল্টার হয়ে যাচ্ছেন। কাজেই আমি মনে করে বন্ড মার্কেটকে যদি ডেভলপ করতে পারি, আরো ভালো করতে পারি, তাহলে সবাই বন্ড মার্কেটে যাবে। সেখান থেকে তারা টাকা তুলবে। আর ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করবে।

গভর্নর আরো বলেন, আমাদের অনেক ব্যাংক টায়ার-২ বন্ড ইস্যু করছে। সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড। আমি যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রেন্ড ছিল এক ব্যাংক বন্ড ইস্যু করলে আরেক ব্যাংককে তা নিতে হতো। আমি যোগ দেওয়ার পর নিয়ম করে দিয়েছি ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড বাইরে বিক্রি করতে হবে। ব্যাংকের বন্ড তো সব সিকিউরড বন্ড। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাংক ফল্ট করেনি। আগামী ৫০ বছরেও ফল্ট করবে না বলে আমি মনে করি। তাহলে সব বন্ড সিকিউরড। তারা কেন মার্কেটে আসবে না। সেটা কেন সাধারণ মানুষ কিনবে না। আমার কাছে এখন পর্যন্ত ৫ থেকে ৬টি ব্যাংক এসেছে। সবাইকে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছি যে ফিফটি পার্সেন্ট বন্ড ক্যাপিটাল মার্কেটে ইস্যু করতে হবে। আমরা পুঁজিবাজারে বন্ডগুলোকে বড় করার চেষ্টা করছি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সেলিম উল্লাহ বলেন, পুঁজিবাজারের মূল বিষয় হলো মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস। এটি আমাদের অর্জন করা খুব জরুরি।

তিনি বলেন, ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়! আর চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখলেও মানুষ ভয় পায়! এটি আমাদের বাস্তবতা, চিরন্তন সত্য বিষয়। সেই ১৯৯৬ আর ২০১০ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানুষ জনের আস্থা ও বিশ্বাস এখান থেকে চলে গেছে। যেভাবে সব লোক এখানে ধাবিত হয়েছিল, এসেছিল, এখন তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাদেরকে ফেরাতে হলে আমাদের চিন্তা করতে হবে।

আজ থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ চলবে আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। সপ্তাহব্যাপী এ আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা থেকে শুরু করে কয়েকজন মন্ত্রী অংশ নেবেন বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্ব পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসসিও) সদস্য লাভ করার পর বাংলাদেশ ২০১৭ সাল থেকে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালন করে আসছে।

এমআই/জেডএস