জিপি-ওয়ালটন-বিএটিসহ ৫১ শতাংশ কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে
পুঁজিবাজারের বড় কোম্পানি গ্রামীণফোন লিমিটেড, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসহ ৫১ শতাংশ কোম্পানি শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের (কোনো কোম্পানির সর্বশেষ পাঁচ কর্ম দিসের শেয়ারের গড় মূল্য) ফাঁদে আটকা পড়েছে। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ার কেনা-বেচা ব্যাহত হচ্ছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস আপতত দৃষ্টিতে পুঁজিবাজারের নিরামক হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাজার। ফলে পুঁজিবাজার আপন গতিতে চলতে পারছে না। জোর করে দরপতন থামানো হচ্ছে। এটা বাজারের জন্য সুখকর নয়।
বিজ্ঞাপন
ফ্লোর প্রাইসের বিষয়টি স্বীকার করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার বিষয়টি আমিও পছন্দ করি না। তারপরও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এটি আমাদের দিতে হয়েছে। তা না হলে বাজারের দরপতন হয়ে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। বাজারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে।
ডিএসইর তথ্য মতে, মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ৩৭০টি কোম্পানির লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৯০ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের কারণে আটকা ছিল। তার আগের দিন সোমবার ফ্লোর প্রাইসের আটকা ছিল ১৮১টি কোম্পানি অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে ৯টি কোম্পানি বেড়েছে। সেই হিসেবে মঙ্গলবার লেনদেন হওয়া ৫১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ছিল ফ্লোর প্রাইসে। দিন যতই যাচ্ছে ফ্লোর প্রাইসে থাকা কোম্পানির সংখ্যা ততই বাড়ছে।
এবারের ফ্লোর প্রাইসের ফাঁদে পড়েছে বাজারে সবচেয়ে ভালো ভালো কোম্পানি। এর মধ্যে মূলধনের দিক থেকে পুঁজিবাজারের সব বড় কোম্পানি গ্রামীণফোন লিমিটেড। কোম্পানিটির বাজার মূলধন ৩৮ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এ কোম্পানির শেয়ারটির সর্বশেষ মূল্য ছিল ২৮৬ টাকা ৬০ পয়সা। ফ্লোরপ্রাইসও ছিল ২৮৬ টাকা ৬০ পয়সা।
বাজার মূলধনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় হলো দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি লিমিটেড। গতকাল মঙ্গলবার শেয়ারটির বাজার মূলধন ছিল ৩১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। শেয়ারটির সর্বশেষ মূল্য ছিল ১০৪৭ টাকা ৭০ পয়সা। এটি ছিল ফ্লোর প্রাইস মূল্য।
একইভাবে আরেক বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর সর্বশেষ মূল্য ছিল ৫১৮ টাকা। ২৮ হাজার ৯ কোটি টাকার কোম্পানিটির এটি ছিল ফ্লোর প্রাইস মূল্য।
দেশের পুঁজিবাজারে অন্যতম প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মঙ্গলবার ছিল ২৯০ টাকা ৮০ পয়সা। ১৮ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকার কোম্পানির ফ্লোর প্রাইসও ছিল এটি।
এছাড়াও ১৫ হাজার ৭১৩ কোটি টাকার রবি আজিয়াটা লিমিটেডের শেয়ারের মূল্য ছিল ৩০ টাকা এবং ১৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকার রেনেটার শেয়ারের মূল্য ১৩০৩ টাকা ৩০ পয়সা। দুটো কোম্পানিই ফ্লোর প্রাইসে আটকা পড়েছে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনাকালে বিনিয়োগকারীদের রক্ষায় দেশে প্রথমবার ২০২০ সালে ফ্লোর প্রাইস (দাম কমার সীমা) দিয়েছি। এর পর বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়। আশা করছি বাজার স্বাভাবিক হলে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে।
চলতি বছরের ২৮ জুলাই পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকাতে সর্বনিম্ন বাজার মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরপর শেয়ার দাম বাড়ায়-কমায় ফ্লোর প্রাইসের নিচে থাকা কোম্পানির সংখ্যাও ওঠানামা করতে থাকে।
এমআই/এমএ