পুঁজিবাজারে আসছে ১৩ কোম্পানি, তুলবে ১২শ কোটি টাকা
নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে পুঁজিবাজারে আসছে আরও অন্তত ১৩টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে বিনা সুদে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএসইসির তথ্য মতে, গত দুই বছরে ৩৪টি কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আরও ১৩টি কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানি আইপিওর অনুমোদন পেয়ে গেছে। বাকি আটটি কোম্পানির আবেদন যাচাই-বাছাই করছে কমিশন।
বিজ্ঞাপন
অনুমোদন পাওয়া পাঁচটি কোম্পানি হলো— গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।
অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে সিকদার ইনস্যুরেন্স, ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, ইসলাম অক্সিজেন, ওমেরা পেট্রোলিয়াম, বি ব্রাদার্স গার্মেন্টস, অনিক ট্রিমস ও থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন।
২০১০ সালের মহাধস-পরবর্তী কমিশন প্রায় ১০০টি কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেয়। এসব কোম্পানির বেশিরভাগেরই অবস্থা খারাপ। অবস্থা এমন হয়েছে যে, অনেক কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে
জানা গেছে, ২০১০ সালের মহাধস-পরবর্তী কমিশন প্রায় ১০০টি কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেয়। এসব কোম্পানির বেশিরভাগেরই অবস্থা খারাপ। অবস্থা এমন হয়েছে যে, অনেক কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে।
বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশেষজ্ঞরা বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কোম্পানির আইপিও অনুমোদন বন্ধ রাখার কথা বলছেন।
এ বিষয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আইপিও অনুমোদনের বিপক্ষে নই। তবে এ মুহূর্তে নতুন কোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন চাই না। কারণ বাজার স্থিতিশীল নয়।
তিনি বলেন, অধ্যাপক খাইরুল কমিশন যেসব কোম্পানির অনুমোদন দিয়েছিল, এখন সেসব কোম্পানির অনেকগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। বাজার আইপিওর চাপ সামলাতে পারছে না।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে চাহিদার চেয়ে শেয়ারের সরবরাহ বেশি। এ অবস্থায় আর কোনো দুর্বল কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া উচিত হবে না।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপাতত আইপিওর অনুমোদন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই বলে আইপিও অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষেও নই আমি। বাজার ভালো হলে আবারও আইপিওর অনুমোদন দিতে পারে কমিশন।
কোন কোম্পানি কত টাকা উত্তোলন করবে
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ফিক্সড প্রাইস মেথডে আইপিওর মাধ্যমে ৪২ কোটি ৫০ লাখ সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে পুঁজিবাজার থেকে ৪২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
মিডল্যান্ড ব্যাংক সাত কোটি শেয়ার ছেড়ে ৭০ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
কোম্পানি দুটি পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করা অর্থ এসএমই, সরকারি সিকিউরিটিজ ও সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ এবং আইপিও খরচ বাবদ ব্যয় করবে।
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করবে বিমা কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে দেড় কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। উত্তোলন করা অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও আইপিও খরচ বাবদ ব্যয় করবে।
একইভাবে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করবে সিকদার ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটি এক কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ১৬ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
ইসলামী কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্স দুই কোটি দুই লাখ ৬১ হাজার ১০৬টি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি ২৬ লাখ ১১ হাজার ৬০ টাকা এবং ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স এক কোটি ৬০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ১৬ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
এ ছাড়া অনিক ট্রিমস লিমিটেড ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে ৩০ কোটি টাকা, বি ব্রাদার্স গার্মেন্টস লিমিটেড ৫০ কোটি টাকা এবং থ্রি অ্যাঙ্গেল মেরিন লিমিটেড ৩২ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করতে চায়।
অপর দিকে আইপিওর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করতে চায় এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড।
এই চার কোম্পানির মধ্যে ওষুধ খাতের কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড ৯৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড পুঁজিবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে। এ অর্থ কোম্পানিটি নতুন ভবন নির্মাণ, ইউটিলিটি ও ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন নির্মাণ, সেফালোস্ফোরিন ইউনিটের সংস্কার, ঋণ পরিশোধ ও আইপিওর ব্যয় বাবদ খরচ করবে।
এ ছাড়া ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড বাজার থেকে ২৩৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং ইসলাম অক্সিজেন ৯৩ কোটি টাকা উত্তোলন করতে চায়।
কোম্পানিগুলো বলছে, বিনা সুদে অর্থ পেলে কোম্পানির ব্যবসা বাড়বে। ব্যবসা বাড়লে মুনাফার অংশ পাবেন বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি নতুন করে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং তারা নিজেরাও ব্যাংক ঋণের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
কী বলছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান
শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানিগুলোর আইপিও অনুমোদনের বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বেশ কিছুদিন আইপিওর অনুমোদন বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেজন্য এখন তাদের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ব্যাংক উদ্যোক্তাদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয়। উদ্যোক্তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের উৎস হলো পুঁজিবাজার। দেশের স্বার্থে উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে অর্থের অভাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। তাই নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য হলেও আইপিওর অনুমোদন দিতে হবে।
এমআই/আরএইচ