বিনিয়োগকারীদের পুঁজি উধাও ১০ হাজার কোটি টাকা
আগস্টের মাসের প্রথম সপ্তাহ উত্থানের পর দ্বিতীয় সপ্তাহ জুড়ে পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। এই দরপতনে লেনদেন হওয়া প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। সূচক ও লেনদেন দুটোই কমেছে। তাতে বিনিয়োগকারীদের মূলধন (পুঁজি) উধাও হয়েছে ১০ হাজার ২১০ কোটি টাকা।
অথচ আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি যোগ হয়েছিল ২১ হাজার ৩৬৪ কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার ৬৩৩ টাকা। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটু স্বস্তি বইতে শুরু করেছিল।
বিজ্ঞাপন
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস থাকছে না— এমন গুজবকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। আরও দরপতন হতে পারে এই ভয়ে বিনিয়োগকারীরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। ক্রেতার তুলনায় বিক্রেতা কম থাকায় শেয়ারের দাম কমেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস উঠে যাচ্ছে এমন গুজব ছড়ানোর কারণে গত সপ্তাহ নেতিবাচক ধারায় পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আসায় আমরা স্পষ্টিকরণ করেছি। যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবো।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ৯ আগস্ট ছুটির থাকায় বিদায়ী সপ্তাহে চার কর্মদিবস লেনদেন হয়েছে। আলোচিত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৪১টির, কমেছে ২৮৭টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।
অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৬৩ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস সূচক ২৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৪৫ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৭০ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সূচক ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমায় বিদায়ী সপ্তাহে বাজার মূলধন (পুঁজি) ১০ হাজার ২১০ কোটি ৯৯ লাখ ২২ হাজার ৩১২ টাকা কমেছে।
সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ কোটি ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫৪ টাকা। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩ হাজার ২৬৬ কোটি ৪০ লাখ ৭২ হাজার ৭৪২ টাকায়। অর্থাৎ মূলধন কমেছে ১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৪ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার ৯৯২ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫ হাজার ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ ২৯ হাজার ৭৮ টাকা। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের চেয়ে কমেছে ১ হাজার ৪৭৪ কোটি ৫৯ লাখ ২ হাজার ৮৬ টাকা। যা শতাংশের হিসাবে ২৯ দশমিক ১৫ শতাংশ কমেছে।
একই অবস্থায় লেনদেন হয়েছে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক ৪১৩ পয়েন্ট কমে ১৮ হাজার ১২৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এসময়ে লেনদেন হয়েছে ৭৪ কোটি ২২ লাখ ৮৭ হাজার ৬৯৯ টাকা।
এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯০ কোটি ৫৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪২ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩২৮টির, কমেছে ৫২টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৫৭টি কোম্পানির শেয়ারের।
এমআই/এসএম