বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের যে টাকা সেভ হচ্ছে, ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে তার চেয়ে বেশি টাকা পাচার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

তিনি বলেন, ট্যাক্স ফ্রি পণ্যের মাধ্যমে ওভার ইনভয়েসিং হয় বেশি, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ট্যাক্স ফ্রি পণ্যের মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকার দিকে নজর দেওয়া।

রোববার (২৯ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির মাল্টিপারপাস হল রুমে বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) আয়োজিত ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ’ শীর্ষক লেকচার সেশনে তিনি এ কথা বলেন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান উদাহরণ দিয়ে বলেন, পাচারকারীরা ৫ ডলারের পণ্যের মূল্য ৭ ডলার দেখিয়ে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। তারা বাংলাদেশের পাশাপাশি হংকং, সিঙ্গাপুর, লন্ডন এবং নিউইয়র্কে নিজের অফিস তৈরি করেছেন। তাদের ছেলে-মেয়েদের বিদেশের রেখেছেন। সেসব দেশে বাড়ি-গাড়ি করছেন এ টাকা দিয়েছে।

তিনি বলেন, লেবানন শ্রীলঙ্কার আগে দেউলিয়া হয়েছে। তারা অনেক আগে থেকেই ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। ওই দেশে কোনো পাওয়ার প্ল্যান্ট নেই। সেটা কিন্তু কেউ বলেনি। ওটা নিয়ে কারও কোনো ব্যথা ছিল না। হঠাৎ সবার শ্রীলঙ্কার কথা মনে পড়ে গেছে। এরপর তারা নানা ধরনের গুজব ছড়াতে শুরু করল। আমরা নিজেরাই শ্রীলঙ্কাকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিলাম। যে সাহায্য দিল, সে-ই নাকি ওর (শ্রীলঙ্কা) মতো হয়ে যাচ্ছে। এটা হয় নাকি।

শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে বাংলাদেশকে টেনে আনার বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, অনেকে অর্থনীতি বুঝেও না বোঝার মতো কথা বলেন। তখনই বিষয়টি হয়ে যায় ক্ষতিকর। আমাদের পাঁচ বছর আগের তুলনায় রেমিট্যান্স এখন কত এবং প্রবৃদ্ধি কত। করোনার সময়ও রেমিট্যান্স বেড়েছে। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, গত ১০ মাসে সাত লাখ শ্রমিক বিদেশ গেছে। যার সুবিধা আমরা এখনো পাইনি। সামনে তারাও রেমিট্যান্স পাঠাবে। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা ২ বিলিয়ন ডলারের সমস্যায় পড়েছে। আর আমরা মাসে শুধু একটা খাত থেকেই ২ বিলিয়ন ডলার পাই। কিন্তু একটি শ্রেণি কোনটার সঙ্গে কোনটার তুলনা করে ভয় দেখিয়ে দেশকে অস্থির করে তুলেছে। এটা আমার বোধগম্য নয়। বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। শুধু স্বপ্ন দেখার অনেক কারণ আছে।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে এখনো করোনা থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। তবে আল্লাহর রহমতে আমাদের সে অবস্থা নেই। যে কারণে সবাই বাংলাদেশ থেকে আমদানি করতে ঝুঁকছে। এ কারণে জাহাজে কন্টেইনার ভাড়া বেড়ে গেছে। নিশ্চয়ই চাহিদা বা রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে এই ভাড়া বেড়েছে। আগে জাহাজ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে যাওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় ট্রান্সজিট বা নোঙর করতে হতো। কিন্তু এখন সরাসরি ইউরোপে যায়। এর কারণ বাংলাদেশ থেকেই জাহাজ পণ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

অন্যদিকে রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে স্বাভাবিকভাবেই আমদানি বেড়েছে বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমাদের পণ্য রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। যে কারণে আমদানিও বেড়েছে। অতএব, এক্সপোর্ট বাড়লে ইমপোর্ট বাড়বেই।

তিনি বলেন, যে অর্থনীতির দেশে (বাংলাদেশ) বছরে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হয়, সেখানে কেন যে মানুষ ভয় পায়, তা আমি বুঝি না। আমরা রপ্তানির অর্থ বাদই দিলাম, বছরে ২২-২৪ বিলিয়ন ডলার তো পাই। এখান থেকে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধে দিতে পারব না। ধরলাম ৪-৫ বিলিয়ন ডলারই ঋণ পরিশোধে যাবে, তাতে কি আসবে যাবে আমাদের। বরং আমরা যদি হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ধরে ফেলতে পারি। তাহলে ৫-১০ বিলিয়ন ডলার বেঁচে যাবে। কারণ এরাই আমদানি-রপ্তানির সময় ওভার ভয়েস-আন্ডার ভয়েস এলসি খুলে বিদেশে টাকা পাচার করে।

বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিড এবং যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। এটা নিয়ে গুজব বা অপব্যাখ্যাও হচ্ছে। এই গুজব এবং অপব্যাখ্যা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং তথ্যের অপব্যাখ্যা রোধ করতে হবে।

এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন— পিকেএসএফএর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান ও বিএএসএমের ডিরেক্টর জেনারেল ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।

এমআই/এসএসএইচ