কারসাজির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি সাফকো স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছেন বহুল আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরো, সজিব হোসেন ও কাজী ফরিদ হাসানসহ ৬ জন।

তারা ২০২১ সালে শেয়ার কারসাজি করে ১১ টাকা থেকে ৩৩ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত শেয়ারের দাম বাড়িয়েছিলেন। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

ছয়জনের বাকি তিনজন বিনিয়োগকারী হলেন, আব্দুল কুদ্দুস আমিন, সুলাইমান ও নুরুন্নেসা সাকি। ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ চক্রটি অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘন করে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০ সালে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির ২০২১ সালের ২০ মে শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ১১ টাকা ৭০ পয়সা। সেই শেয়ার ৮ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ টাকা ২০ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ারটির দাম বাড়ানো হয় ২১ টাকার বেশি। যা বুধবার (১৮ মে) সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২১ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ ৩৩ টাকা দরে যে সব বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি কিনেছিলেন, এখন তাদের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১২ টাকা করে।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কারসাজির আলামত পাওয়া গেছে। বিনিয়োগকারীরা আবুল খায়ের হিরো, সজিব হোসেন, কাজী ফরিদ হাসান, আব্দুল কুদ্দুস আমিন, সুলাইমান ও নুরুন্নেসা সাকি কোম্পানিটির শেয়ার কেনাবেচায় সিকিউরিটিজ আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করেছেন।

আবুল খায়েরের সহযোগীরা বিএসইসির শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত বিধিমালার (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪(১) নং ধারা লঙ্ঘন করেছেন। বিধিমালার শর্ত পূরণ না করেই তারা সাফকো স্পিনিংয়ের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনেছেন।

কারসাজির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্টার বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরো। তিনি বলেন, আমি ৫ শতাংশ শেয়ার কিনেছি, ১০ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করিনি।

নিয়ম অনুসারে, কোনো কোম্পানির ১০ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার কিনতে চাইলে বা ধারণ করলে স্টক এক্সচেঞ্জে তার ঘোষণা দিতে হয়। কিন্তু আলোচিত ব্যক্তিরা এই ঘোষণা না দিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সজিব হোসেন, কাজী ফরিদ হাসান, আব্দুল কুদ্দুস আমিন, সুলাইমান ও নুরুন্নেসা সাকি এমন কিছু লেনদেন করেছেন, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ১৭(ই) ধারার লঙ্ঘন। এই বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি কেনাবেচার সময়ে বাজারে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সজিব হোসেন ও তার সহযোগীরা সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে শেয়ারটির দাম বাড়িয়েছেন, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর লঙ্ঘন।

কোম্পানির তথ্য মতে, কোনো রকম সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই শেয়ারটির দাম ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে বাড়তে শুরু করে। সেদিন শেয়ারটির দাম ছিল ৯ টাকা ৭০ পয়সা। মাত্র চার মাস সময়ের সেই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ে কয়েকগুণ।

কারসাজির এই তদন্ত প্রতিবেদন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) দেওয়া হয়েছে। কারসাজির বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে গত ১১ মে উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবালকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে তদন্ত শেষ করে কমিশনের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য ৩০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

এমআই/এসকেডি