দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সরকারি বন্ডের (সিকিউরিটিজ) লেনদেন তথা বিল-বন্ড ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী এপ্রিল থেকে। বন্ডে লেনদেনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের কোনো ফি দিতে হবে না। যে কেউ বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্ট থেকে (বিও হিসাব) যত ইচ্ছা তত টাকার বন্ড কিনতে পারবেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বন্ডে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে এ সুযোগ রাখা হয়েছে বলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্ডের লেনদেন শুরু হলে একদিকে সরকারের ঋণ পাওয়া সহজ হবে, অন্যদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সরকারকে ঋণ দেওয়ার চাপ কমবে। বিশেষ করে ব্যাংকের ওপর ট্রেজারি বন্ড ধারণ করার যে চাপ, সেটা কমে যাবে। বিনিয়োগকারীরা ফিক্সড আয়ের বন্ডে বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারবেন। আবার পুঁজিবাজারের তারল্য পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। সব পক্ষেই উপকৃত হবেন।

ডিএসইর তথ্য মতে, এরই মধ্যে ডিএসইতে সরকারি বন্ডের পরীক্ষামূলক লেনদেন করা হচ্ছে। সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের কাজ করছে এখন প্রতিষ্ঠানটি। যা মার্চ মাসেই শেষ হয়ে যাবে। এরপর সব পক্ষের সমন্বয়ে সংশ্লিষ্ট সিস্টেমে ইউজার অ্যাকসেপ্টেন্স টেস্ট (ইউএটি) কার্যক্রম শেষ করে এপ্রিলের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক লেনদেন চালু করা হবে। স্টক এক্সচেঞ্জের প্লাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন চালু সংক্রান্ত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

সূত্র জানায়, দেশের বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে বেশ কয়েক বছর আগে স্টক এক্সচেঞ্জের প্লাটফর্মে বন্ডের ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। সর্বশেষ মার্চের প্রথম সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জের প্লাটফর্মে সরকারি ট্রেজারি বন্ড লেনদেনের জন্য প্রস্তুত করা প্রসেস ফ্লো এবং বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসই, সিএসই এবং সিডিবিএলের মধ্যে হওয়া সমঝোতা স্মারক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

স্টক এক্সচেঞ্জ প্লাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজ চালু নিয়ে প্রস্তাবিত প্রাথমিক খসড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজনেস পার্টনার আইডির (বিপিআইডি) মেইনটেন্যান্স ফি মওকুফের প্রস্তাব করা হয়।

চূড়ান্ত খসড়ায়ও সে বিষয়টি সন্নিবেশ করা হয়েছে এবং তা সর্বদা মওকুফ বলে সিদ্ধান্ত হয়। ডিএসই, সিএসই ও সিডিবিএল লেনদেন পর্যায়ে তাদের বিভিন্ন প্রকার ফি মওকুফ করার বিষয়ে একমত হয়।

এ বিষয়ে কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এপ্রিলের মধ্যেই পুঁজিবাজারে বন্ডের লেনদেন চালুর চেষ্টায় আছি। তবে এটা নির্ভর করে স্টক এক্সচেঞ্জের সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট কাজের ওপর। এটা যত দ্রুত সম্পন্ন হবে তত দ্রুত লেনদেন চালু করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিচালিত বাজার অবকাঠামো (এমআই) মডিউলে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের কেনাবেচা হচ্ছে। দেশের প্রতিটি ব্যাংক থেকে ‘সিকিউরিটি হিসাব’ খোলার মাধ্যমে সাধারণ মানুষেরও সরকারি বন্ড কেনার সুযোগ রয়েছে। এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে কমপক্ষে এক লাখ টাকা বা এর গুণিতক। তবে পুঁজিবাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে এ সীমা প্রযোজ্য হবে। যেকোনো পরিমাণ টাকার বন্ড কেনার সুযোগ মিলবে।

জানা যায়, সরকারি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার সঞ্চয়পত্রের তুলনায় কম। বর্তমানে বিভিন্ন মেয়াদি বন্ডের কুপন রেট তথা সুদ ৯ শতাংশের নিচে। তবে এই বন্ডে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয় তথা মুনাফা করমুক্ত।

এমআই/এসএসএইচ