দেড় বছর পরও করোনাভাইরাস রোগকে বিমার পলিসির আওতায় নিয়ে আসেনি দেশের বিমা কোম্পানিগুলো। অথচ ইউরোপ-আমেরিকায় এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-পাকিস্তানেও স্বাস্থ্যবিমার আওতায় করোনা রোগীরা বিমা সুবিধা নিচ্ছেন। ফলে রোগীরা দুর্যোগের এই সময়ে একদিকে হাসপাতালগুলোতে দ্রুত চিকিৎসা পাচ্ছেন। অন্যদিকে আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছেন।

কিন্তু বাংলাদেশের বিমা কোম্পানিগুলো এখনও বিষয়টি নিয়ে চিন্তার মধ্যেই নিমজ্জিত। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের মতোই বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে শুরু হয়েছে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। অনেকক্ষেত্রে সেবাও পাচ্ছেন না মানুষ। এ অবস্থায় বিমা সুবিধা পেলে রোগীরা উপকৃত হতেন বলে ধারণা অনেকের।

এ বিষয়ে বিমা মালিক ও সিইওদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির বলেন, করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সক্ষম বিমা কোম্পানিগুলোকে করোনা বিমা চালুর জন্য বলেছি।

সব বিমা কোম্পানিকে করোনা বিমা করার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোকে বিমা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। তবে যেসব কোম্পানির স্বাস্থ্যবিমা প্রোডাক্ট রয়েছে, তাদের পলিসি নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে বিমা কাভারেজের আওতায় আনার জন্য বলেছি। আশা করছি কোম্পানিগুলো করবে।

দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৭৯টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলোর দেখভাল করছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা নামে এখনও কোনো বিমা পলিসি সেবা চালু করিনি। তবে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে তারা বিমা সুবিধা পাবেন।

তবে তিনি মনে করেন, করোনার জন্য আলাদা বিমা চালু করা উচিত। কারণ করোনায় শুধু মৃত্যুই নয়, সুস্থ হওয়ার পর অনেকের কিডনি, হৃদপিণ্ড ও স্নায়বিক সমস্যা হচ্ছে। আইডিআরএ’র পক্ষ থেকে করোনা বিমা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহুরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা প্রোডাক্ট চালুর জন্য একচুয়ারির মতামত চেয়েছি। অস্ট্রেলিয়ার ওই একচুয়ারি মতামত দিলে তার পর সিদ্ধান্ত নেব।

সন্ধানী লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসানুল ইসলাম টিটো ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার এই মহামারিতে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। তবে করোনার জন্য আলাদা কোনো বিমা নেই বলে জানান তিনি।

বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও পপুলার লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্ট বলেন, দ্রুত বিমা কোম্পানির করোনা বিষয়ক আলাদা পলিসি করা দরকার।

ইউরোপ আমেরিকার মতোই করোনা শুরুর বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের জুনে ভারতের বিমা কোম্পানিগুলোকে স্বল্প মেয়াদি স্বাস্থ্যবিমা চালু করতে নির্দেশনা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এরই আওতায় ভারতের রিলায়েন্স জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড করোনা ইন্স্যুরেন্স স্কিম চালু করে। ৩ মাস বয়সের শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছর বয়সীদের এই বিমার আওতায় আনা হয়েছে।

তার আগে স্টার নভেল করোনাভাইরাস ইন্স্যুরেন্স পলিসি নামে পলিসি চালু করে ভারতের স্টার হেলথ অ্যান্ড অ্যালাইড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। তাতে ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের আইসিআইসিআই লম্বার্ড জেনারেল ইন্স্যুরেন্স করোনা প্রোটেকশন কভার পলিসি চালু করেছে। এছাড়া পাকিস্তানের ইএফইউ লাইফ করোনা তাহাফফুজ পলিসি স্কিমের আওতায় করোনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে হাসপাতালের সব খরচ বহন করছে।

অথচ বাংলাদেশে ৭৯টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০টি বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এই বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে দুই থেকে তিনটি কোম্পানি করোনা পলিসি নিয়ে ভাবছে। আর বাকিগুলো কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না।

এমআই/এসএসএইচ