বিভিন্ন অভিযোগে বরখাস্ত করা ৫ কর্মকর্তাকে পুনর্বহালসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মীরা।

বুধবার (১০ জুলাই) রাজধানীর মালিবাগে কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান নিয়ে এ দাবি জানান। আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। স্মারকলিপিতে গত ২ মাসে প্রশাসকের নেওয়া নানান পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, অনৈতিক, অনভিপ্রেত, দূরভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপের কারণে সোনালী লাইফ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সব এফএ, ইউএম ও বিএমদের বকেয়া পাওনা দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। নিরপেক্ষ অডিট কোম্পানি দিয়ে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ অডিট সম্পন্ন করে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। স্যালারি পলিসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে অন্যান্য জীবন বিমা কোম্পানির প্রচলিত সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় রেখে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিয়ম যথাযথ প্রতি পালনের সাপেক্ষে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহিল কাফী, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. আজিম এবং সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঞ্জুর মোর্শেদকে দ্রুত পদে বহাল করতে হবে। হেড অফিসের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নিয়োগ করা অস্ত্রধারী আনসার সদস্যদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং আইডিআরএর প্রশাসক নিয়োগপত্রের ৯৫(১) ধারার বাইরে স্বেচ্ছাচারী কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা যাবে না। 

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এস এম ফেরদৌস একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সবার মাঝে ভয় ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সারা দেশের প্রায় ২৭ হাজার বিমা কর্মীর কমিশনের টাকা আটকে রাখার থেকে শুরু, এরপর আইটিসহ বিভিন্ন বিভাগের নিবেদিত কর্মীদের নামে সহকর্মীদের দিয়ে জোর করে মামলা করানোর হুমকি দেওয়া, কথায় কথায় কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ, অতীতের সব রেওয়াজ ভেঙে নিজের বেতন ৫ লাখ টাকা ধরা, সঙ্গে বোনাস বাবদ আরও ৩ লাখ, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়েই ডিএমডি পদে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চাকরি দেওয়া, ১৭ জন শীর্ষ নির্বাহী এবং ৩৩ জন ড্রাইভারের জুন মাসের বেতন আটকে রাখা, ডিএমডি পদমর্যাদায় নিযুক্তসহ সেনাবাহিনীতে তার সাবেক ৪ সহকর্মীকে গড়ে ২ লাখ টাকা বেতনে সোনালী লাইফে নিয়োগের ১ মাসের পরই নিয়মের বাইরে গিয়ে উৎসব ভাতা দিয়েছেন প্রশাসক।

কম বেতনের কর্মীদের জন্য ভর্তুকিমূল্যে খাবার সরবরাহের জন্য স্থাপিত ক্যান্টিন ভেঙে সশস্ত্র আনসারদের আবাসন করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সারাদেশ থেকে আসা নির্বাহী এবং শাখা ম্যানেজারদের থাকার জন্য নির্মিত আবাসনের জায়গায় ২ জন আনসার এবং প্রশাসকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীর থাকার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। সর্বশেষ গত ৭ জুলাই সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলামসহ শীর্ষ ৫ নির্বাহীকে বরখাস্ত করেছেন। প্রশাসক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফেরদৌস তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সোনালী লাইফ ধ্বংস করছেন, এই মর্মে প্রতিকার চেয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেওয়ার অপরাধে ওই ৫ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন ২৫ জুন। 

প্রশাসকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোনালী লাইফের প্রধান কার্যালয়ের (বর্ধিত) সামনে জমায়েত হন বিমা কোম্পানিটির ঢাকা ও এর আশপাশে কর্মরত মাঠকর্মী ও কর্মকর্তারা। এ সময় তারা প্রশাসকের অপসারণসহ পরিচালনা পর্ষদের হাতে কোম্পানির দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান।  

তিনি বলেন, সোনালী লাইফের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গ্রাহকের কোনো অভিযোগ নেই। সঠিক সময়ে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে সোনালী লাইফে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ। এই নিয়োগটাই ছিল অবৈধ। 

তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট যেখানে প্রশাসককে তদন্তের জন্য সময় দিয়েছিল ২ মাস। সেখানে ৩ মাস হয়ে গেলেও এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। এছাড়াও সোনালী লাইফকে ধ্বংস করার জন্য কর্মীদের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে, সেলস পলিসি বন্ধ করা হয়েছে। প্রশাসকের অদক্ষতার কারণে গত ৩ মাসে সোনালী লাইফের ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

সোহেল রহমান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ করছি। প্রশাসককে অমান্য করার এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের যে অভিযোগ আনা হয়েছে সে আইন প্রশাসক নিজেই তৈরি করেছেন। তিনি আইডিআরএর আইনের বাইরে গিয়ে আমাদের ছাঁটাই করছেন। তিনি (প্রশাসক) নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ করেছেন, সেলস পলিসি বন্ধ করেছেন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করছেন।

এসআর/এসকেডি