ঘুষের বিনিময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসিয়াল আদেশে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দেওয়া হয়েছে। 

পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ অন্তত পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লোপাট করেছেন প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব অর্থ লোপাটের তথ্য চাপা দিতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিম। এসব অনিয়মের সহায়তা করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। বিনিময়ে পেত আর্থিক সুবিধা। পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হকের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রাশেদুল হক। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়।

২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব পান হলেন শাহ আলম। কুমিল্লা জেলার সদর থানাধীন চম্পকনগর গ্রামে জন্ম নেওয়া শাহ আলমের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার ডিগ্রি রয়েছে। তিনি ১৯৮৮ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ পরিদর্শন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ, বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ, ভিজিলেন্স ডিভিশন (বর্তমানে এফআইসিএসডি), বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহর কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাশেদুল হক বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম চাপা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দিত রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (বর্তমানে নির্বাহী পরিচালক) শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো দুই লাখ টাকা করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ‘ম্যানেজ’ করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

এসব অভিযোগ ওঠার পর প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসাবে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়া হলো।

এসআই/এনএফ