মোবাইলে ব্যাংকিংয়ে দিনে লেনদেন ১৮২৪ কোটি টাকা
>> বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক
>> বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ
>> ডিসেম্বরে লেনদেন ৫৬ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা
মহামারি করোনাভাইরাসে বিকাশ, রকেট ও শিওর ক্যাশসহ অন্যান্য মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। এর ধারাবাহিকতায় দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও।
বিজ্ঞাপন
তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এখন সহজ ও জনপ্রিয় একটি সেবা।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৯ কোটি ৯৩ লাখ ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে পুরো মাসে লেনদেন হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। প্রতিদিন এর গড় এক হাজার ৮২৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) ডিসেম্বর মাসের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এ প্রতিবেদনে ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা ‘নগদ’ এর তথ্য নেই।
জানা গেছে, টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবগুলোকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
পরিসংখ্যান বলছে, আলোচিত সময়ে এমএফএস সেবার লেনদেন ও গ্রাহক সংখ্যার পাশাপাশি সেবায় সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যাও বেড়েছে। ডিসেম্বর মাস শেষে এমএফএস সক্রিয় গ্রাহক এক মাসের ব্যবধানে দুই দশমিক এক শতাংশ বেড়ে তিন কোটি ২৩ লাখ ২৭ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৭ জনে।
এ সব বিষয়ে এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম ঢাকা পোস্ট-কে জানান, করোনার কারণে মানুষ এখন ঘরে বসে ডিজিটাল লেনদেন বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এছাড়া সরকার এখন সামাজিক সুরক্ষার আওতায় বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা মোবাইল অ্যাকাউন্টে দিচ্ছে। পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও মোবাইলে দেয়া হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থনীতির গতি ফিরেছে।
তিনি বলেন, সবমিলিয়ে, মোবাইল ফাইন্যান্সের লেনদেন বেড়েছে। দিন দিন এমএফএস সেবার আওতা ও পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। আগামীতে এ সেবার অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেন বিকাশের এ কর্মকর্তা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে মোবাইলে ও মোবাইল থেকে ব্যাংকেও লেনদেন করাও সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহক।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে এমএফএসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ ১৫ দশমিক চার শতাংশ বেড়েছে। এ সময় রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে দুই হাজার ৯৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৮৩৪ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৩২ কোটি টাকায়।
জানা গেছে, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।
এসআই/এফআর