মেঘনা, এনআরবি ও এনআরবিসি ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

এবার বেসরকারি খাতের মেঘনা, এনআরবি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে প্রতিটি ব্যাংকে ৭ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১২ মার্চ) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান ঢাকা পোস্ট‌কে বিষয়‌টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, তিনটি ব্যাংকের ৭ জন করে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাংকের পরিচালকরা তাদের স্ব স্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে হবে, তা তারা নির্বাচিত করবেন। আগামীকাল এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

ব‌্যাংক তিন‌টি‌কে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে কেবল এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুই ব্যাংকের পরিচালকরা তা‌দের স্ব স্ব ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে হবেন, তা তারা নির্বাচিত করবেন। 

এনআরবিসি ব্যাংক

এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া আলী হোসেন প্রধানিয়াকে চেয়ারম‌্যান করা হ‌য়ে‌ছে। তি‌নিসহ সবাই স্বতন্ত্র পরিচালক। ব‌্যাংক‌টি‌তে নিয়োগ পাওয়া অন্য পরিচালকরা হ‌লেন– বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আবুল বশর ও আনোয়ার হোসেন, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মো. নুরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. শফিকুর রহমান, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মুহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ।

মেঘনা ব্যাংক 

মেঘনা ব্যাংকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে উজমা চৌধুরী এবং ক্যাসিওপিয়া ফ্যাশনের প্রতিনিধি তানভীর আহমেদ পরিচালক হয়েছেন। তবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে কারও নাম দেওয়া হয়নি। পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ডেকে এখন নিজেরা ঠিক করবে। আর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. মামুনুল হক ও রজব আলী, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. নজরুল ইসলাম, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক হাবিবুর রহমান এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মো. আলি আকতার রিজভীকে। 

এনআরবি ব্যাংক 

এনআরবি ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া পরিচালকদের মধ্যে ইকবাল আহমেদই ছিলেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক। তাকে সরিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ আঁকড়ে ছিলেন মাহতাবুর রহমান। নতুন পর্ষদে ইকবাল আহমেদ ছাড়া অন্য সবাই স্বতন্ত্র পরিচালক। অন্যদের মধ্যে আছেন– গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ফেরদৌস আরা বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শেখ মো. সেলিম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এমডি মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি শেখ মতিউর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরীফ নুরুল আহকাম এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মিজানুর রহমান এফসিএ।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ৮টিসহ মোট ১১ ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার দ্বিতীয়বারের মতো অ্যাকশনে গিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরই ব্যাংকিং খাতে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আর্থিক খাতকে ঢেলে সাজাতে একগুচ্ছ কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করেন। এর মধ্যে বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের হাত থেকে দখলমুক্ত করেন ইসলামী, এসআইবিএল, ফার্স্ট সিকিউরিটিসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক।

এ ছাড়া আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার রোধ, মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধিসহ আরও কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাহসী পদক্ষেপে এরই মধ্যে দেশের মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে খুব শিগগিরই আরও ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশাবাদী গভর্নর।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। গত দুই বছরে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ, ঋণের নামে ব্যাংক লুটপাট আর বিদেশে অর্থপাচার, লাগামহীন খেলাপি ঋণ, ব্যাংকে তীব্র তারল্য সংকট, ডলার ও রিজার্ভ সংকটে ব্যাংক খাতের ক্ষত আরও গভীর হয়েছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল, সেটিও পালন করেননি ওই সময়ের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বরং দফায় দফায় তার ভুল নীতির খেসারত দিতে হয়েছে ব্যাংক খাতকে। এতে ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থাহীনতা বাড়ে।

এসআই/এমজে