বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ ও নিজের জামাতাকে (মেয়ের স্বামী) ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক এবং নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে। এ বিষয় গত ২৮ ডিসেম্বর ছাপানো টাকা ধার নিয়ে ঋণ—“ঋণের টাকা দিতে ‘অক্ষম’ প্রতিষ্ঠানকে আবারও ঋণ দিলো ইসলামী ব্যাংক”—এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। এরপরই টনক নড়ে ব্যাংকটির, ব্যবস্থা নেয় পর্ষদ।

গত ৬ জানুয়ারি এ অভিযোগে নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে আব্দুল জলিলকে সরিয়ে দিয়েছে ব্যাংকটি। সম্প্রতি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ তাকে অব্যাহতি দিয়েছে।

সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকের নতুন ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গত ১০ ডিসেম্বর ইসি সভায় ‘ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রস্তাবিত ঋণের অঙ্ক ছিল ২২৫ কোটি টাকা। ঋণ অনুমোদনের দিন সকালে একপ্রকার তড়িঘড়ি করে ইসি চেয়ারম্যানের মৌখিক নির্দেশে সেই সীমা বৃদ্ধি করে ২৫০ কোটি টাকা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ঋণখেলাপি এবং তাদের কাছে ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা অনাদায়ী। এর পরের সভায় ঋণ অনুমোদন নিশ্চিত করে শাখাকে চিঠি দেওয়ার কথা থাকলেও সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়নি। অনুমোদনের পরদিনই তড়িঘড়ি করে ঋণ বিতরণ করা হয়। মূলত ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেক ঋণ বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপ নিয়ে গেছে। ব্যাংকটির এখন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে খেলাপি গ্রাহকের নামে নতুন ঋণ অনুমোদন করে ইসি সভা। যা নীতি রীতিমত অবাক সংশ্লিষ্টরা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংক পরিচালনায় যাদের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সাবেক ব্যাংকার আব্দুল জলিল। তাকে ইসি চেয়ারম্যান করা হয়। সেই সুযোগে তিনি অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক আব্দুল জলিল। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সোমবার ইসি চেয়ারম্যানের পদ থেকে আব্দুল জলিলকে সরিয়ে দেয়। তার পরিবর্তে স্বতন্ত্র পরিচালক মুহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাবকে ইসি চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এর আগে তিনি ইসি কমিটির সদস্য ছিলেন।

জানা গেছে, আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে গত মাসে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে মশিউর রহমান নামে একজনকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি করার অভিযোগ উঠেছে। মশিউর রহমান সম্পর্কে আব্দুল জলিলের জামাতা। আব্দুল জলিল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজেরও চেয়ারম্যান।

আব্দুল জলিল এক সময় ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করতেন। এরপর তিনি ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেডে কাজ করেন। গত ২২ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন পর্ষদে রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি মো .আব্দুল জলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সের  সাবেক অধ্যাপক ড. এম মাসুদ রহমান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট মো. আবদুস সালাম।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তিত হওয়ার পর নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের টাকা বের করে নেয় এস আলম গ্রুপ। গত ১৮ নভেম্বর ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এস আলম ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। শুধু টাকাই নেননি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকটির সম্পর্কও ধ্বংস করে দিয়েছে।

এসআই/এসএম