আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া দুই ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার ও ড. হাবিবুর রহমানের পদত্যাগসহ অফিসার্স কাউন্সিলের ‘বিবি-নাইট’ বাতিলের দা‌বি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

বুধবার (৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে গভর্নরকে স্মারকলিপি দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকার্স প্লাটফর্ম খ্যাত ‘দুর্নীতিমুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠন পরিষদ’।

একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সংগঠন অফিসার্স কাউন্সিল উদ্যোগে আসন্ন ২০ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠাতব্য ‘বিবি-নাইটে’ গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরকে শারীরিকভাবে উপস্থিতি না থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন আন্দোলনরত কেন্দ্রীয় ব্যাংকার্সরা।

স্মারকলিপিতে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো— আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া এবং ব্যাংক লুটেরাদের সহচর ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার ও ড. হাবিবুর রহমানকে দ্রুত সময়ে পদত্যাগ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগের পর সব ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগ করার দাবি ছিল। কিন্তু ব্যাংকের কাজ নির্বিঘ্নে করতে নুরুন নাহার ও ড. হাবিবুর রহমানকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হয়। বর্তমানে গভর্নর এবং দুইজন ডেপুটি গভর্নর যোগদানের ফলে তাদের আর থাকার সুযোগ থাকে না।

কেননা, তাদের মতো সাবেক সরকারের নিয়োগ পাওয়া গভর্নর, দুইজন গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান এবং নীতি উপদেষ্টা ইতোমধ্যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে এই দুইজনকে রাখাটা বৈষম্য। আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বর্তমান নাজুক অবস্থায় অফিসার্স কাউন্সিল আয়োজিত অনুষ্ঠাতব্য বিবি নাইটস অনুষ্ঠান বাতিলে দাবি জানায়। তবে তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) পালনে বাধা দেবেন না বলে জানান।

পাশাপাশি সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের রাজনৈতিক মদদপুষ্ট এস আলম গ্রুপসহ ব্যাংকিং খাতে লুটেরা গোষ্ঠীর সঙ্গে আঁতাতকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগ্য কর্মকর্তাদের পদায়নের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করার দাবি জানান।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনগত, আর্থিক, পরিচালনগত ও ব্যবস্থাপনা স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা। তাছাড়া গত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে চর দখলের মতো ব্যাংক দখল, অনিয়ম, লুটপাট, দুর্নীতি বন্ধ করতে জোর দাবি তোলেন তারা।

আন্দোলনকারীরা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগের পর সব ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগ করার দাবি ছিল। কিন্তু ব্যাংকের কাজ নির্বিঘ্নে করতে নুরুন নাহার ও ড. হাবিবুর রহমানকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হয়। বর্তমানে গভর্নর এবং দুইজন ডেপুটি গভর্নর যোগদানের ফলে তাদের আর থাকার সুযোগ থাকে না। কেননা, তাদের মত সাবেক সরকারের নিয়োগ পাওয়া গভর্নর, দুইজন দুইজন গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান এবং নীতি উপদেষ্টা ইতোমধ্যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে এই দুইজনকে রাখাটা বৈষম্য।

আন্দোলনকারী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমান কাউন্সিলের মেয়াদ গত মে মাসে শেষ হয়েছে। তারা ক্ষমতার জোরে নির্বাচন না দিয়ে স্বপদে রয়েছেন, যা শতভাগ অনৈতিক। তারা আওয়ামী লীগের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা নতুন গভর্নরকে চাপে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আর কাউন্সিলের আগের জমানো অর্থ তছরুপের নীলনকশার অংশ হিসেবে বিবি-নাইটের আড়ালে বিলাসিতায় বিভোর হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি দুই ডেপুটি গভর্নরকে দিয়ে পোস্টিং এবং বদলি করতে অবৈধ প্রভাব খাটাচ্ছেন। গভর্নরকে ভুল বুঝিয়ে আওয়ামী লীগের স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজ করছেন বলে অভি‌যোগ ক‌রেন আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা।

এসআই/এসএসএইচ