এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়া ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীকে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া যা‌চ্ছে না। তিনি বাসায় নেই, অফিসও করছেন না। বুধবার (৯ অক্টোবর) ব্যাংকে যাননি। ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী‌ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকেও উপস্থিত হননি। আর ব্যাংকের এমডি নিখোঁজের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে বুধবার ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মো. ফরিদউদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

অন্যদিকে বুধবার মোকাম্মেল হক চৌধুরীর মোবাইলও বন্ধ পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, মোকাম্মেল হক চৌধুরীর বিষয়টি আলোচনায় আসে ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের এক সভায়। সেখানে জানানো হয় বুধবার পূর্বনির্ধারিত সভায় যোগ দেওয়ার জন্য এমডিকে পাওয়া যায়নি। পরে এমডি নিখোঁজের ঘটনায় ইউনিয়ন ব্যাংককে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি নতুন কাউকে ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

অপর সূত্র জানায়, আমানতকারীদের স্বার্থে ব্যাংকটির পরিচালকদের সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সভায় পরিচালকরা জানান, তারা দায়িত্ব নিলেও ব্যাংকটির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে এখনও জানতে পারেননি।

আরও কয়েকটি ব্যাংকের মতো ইউনিয়ন ব্যাংকের মালিকানা ছিল বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের হাতে। ব্যাংকটির ঋণের ১৮ হাজার কোটি টাকা বা ৬৪ শতাংশই নিয়েছে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় পরিচালকরা জানান, এমডি বুধবার অফিসে যাননি। তার বাসায় লোক পাঠিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাসা তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, বুধবার সকালেই এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী ও তার স্ত্রী নাজনীন আকতারের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের জন্য এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে হিসাব স্থগিতের নির্দেশনা পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ইউনিয়ন ব্যাংকের অনেক গ্রাহক হিসাব থেকে টাকা তুলতে না পারলেও মোকাম্মেল হক তার বেতনের পুরো টাকা তুলে নিয়েছেন।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ব্যাংকের এমডি ২ ও ৩ অক্টোবর ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর তিনি ২ লাখ টাকা ও ৫ সেপ্টেম্বর ৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর তার হিসাবে ৫০ লাখ টাকা জমা হয়। একইদিন বেতনের ১০ লাখ ৮ হাজার ২৪২ টাকা জমা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর ওই হিসাবে জমা হয় আরও ৪২ লাখ টাকা। এরপর তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর ৫০ হাজার টাকা, ২ অক্টোবর ৫০ লাখ টাকা এবং ৩ অক্টোবর ৫০ লাখ ও ৫৩ লাখ টাকা তোলেন।

এসআই/এসএসএইচ