দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। আর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে যে সুদ হারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেয়, তাকে বলে ব্যাংক রেট। রেপো রেট বৃদ্ধি করায় ব্যাংকগুলোর অর্থ নেওয়ার খরচ বাড়বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করে, তার সুদহার বাড়বে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে রাখা আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদহারও বেড়ে যাবে।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নীতি সুদহার বা রেপো রেট দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশে পুন:নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করবে, তার সুদহার বাড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নীতি সুদহার করিডোরের উর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং ল্যান্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১১ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ বেসিস পয়েন্ট করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, নীতি সুদহার বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হবে।  মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে মনিটারি পলিসি কমিটির পঞ্চম সভায় নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, বাড়তে থাকা খাদ্যপণ্যের তথা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফের পলিসি রেট বা নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি সপ্তাহে এ সুদহার বাড়ানো হবে। পর্যায়ক্রমে তা আগামী মাসেও বাড়বে।

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া চলতি বছর জুলাইয়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়, যা ২০১০-১১ অর্থবছরের পর সর্বোচ্চ।

গেল অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি ছিল।

পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০২২ সালের মে মাস থেকে বেশ কয়েকবার সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পলিসি রেট বাড়াচ্ছে। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়েছে এবং ঋণ নেওয়া আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।

এসআই/এমজে