রিট করে খেলাপি ঋণ স্থগিত রাখার যে প্রবণতা চালু আছে এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতারা। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতের সংস্কারে নীতি তৈরির সময় অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গভর্নরকে অনুরোধ করেছেন তারা।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিএবি’র নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে এসব অনুরোধ করেন। বৈঠক শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা।

মুখপাত্র জানান, রিট করে খেলাপি ঋণ বন্ধ রাখার যে প্রবণতা সেটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিএবি নেতারা। বিএবি নেতাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে গভর্নর জানিয়েছেন— এটা নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে এবং এই আলোচনা মাথায় রেখে পলিসি তৈরি করা যেতে পারে।

বিএবির দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে গভর্নর বলেছেন, এনপিএল (খেলাপি ঋণ) রেগুলেটরি পরিবর্তন করতে হবে।

অর্থঋণ আদালতের যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করার দাবিও জানান ব্যাংক মালিকরা। এ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, এটা অর্থঋণ আদালতের বিষয়। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলব।

বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পলিসি বাস্তবায়ন করে সেগুলো বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে মাথায় রেখে করার দাবি জানান ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা। জবাবে গভর্নর জানান, আন্তর্জাতিক পলিসি স্ট্যান্ডার্ডকে ফলো করে এগুলো করা হয়। তাই বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে যারা কাজ করে তাদেরকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে হবে।

তারল্য সাপোর্টের বিষয়ে বিএবি নেতারা বলেছেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সাপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করে। আর ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য আলাদা গাইডলাইন ও নীতিমালা তৈরির কথা উল্লেখ করেন। তবে গভর্নর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

অপরদিকে এমডি ও স্টাফদের বেতনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে হস্তক্ষেপ করে সেটা ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়ার দাবিও জানান পরিচালকরা। তাদের এ প্রস্তাবে গভর্নর একমত পোষণ করে বলেন, এগুলো ধীরে ধীরে ব্যাংকের উপর ছেড়ে দেওয়া হবে।

সবশেষ ২০২৪ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি আদালতে রিট করা হিসাবের সঙ্গে সব যোগ করা হয় তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।  

এসআই/এমজে