এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে অবহেলার অভিযোগে এবি ব্যাংকের লিগ্যাল অ্যান্ড রিকভারি ডিভিশনের প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন সুপারিশ করা হবে না, তা ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন। শিপব্রেকিং খাতের পলাতক ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান লস্করের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এ আদেশ দেওয়া হয়।

আদালত সূত্র জানায়, এক হাজার ১২৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে ২০২৩ সালের ১৮ জুন আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। এরপর ওই খেলাপির বিরুদ্ধে আদালতে সশরীরে হাজির হওয়া ও ঋণের টাকা পরিশোধের আদেশ দিলেও তা প্রতিপালন হয়নি। এমনকি অর্থঋণ আদালত আইনের ৩৩ (১) ধারা অনুযায়ী ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রির পদক্ষেপ নিতে পারেনি ব্যাংক। তাই শুনানি শেষে আদালত রোববার এ আদেশ দেন।

তথ্যমতে, মাহিন এন্টারপ্রাইজ নামে ব্যবসা করা আশিকুর রহমানের কাছে সুদা আসলে এবি ব্যাংকের বর্তমান পাওনা এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ৬ মার্চ কমপক্ষে দশ ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা টাকা ঋণ শোধ না করে দেশত্যাগ করেন এই ব্যবসায়ী। বর্তমানে কানাডার টরেন্টোতে বসবাস করছেন তিনি।

এবি ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৪ সালে এবি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা থেকে প্রথম ঋণ সুবিধা নেন আশিকুর রহমান। এরপর ২০০৭-০৮ সাল থেকে ধীরে ধীরে বড় অঙ্কের ঋণসুবিধা নিতে থাকেন। বিএনপি নেতা ও ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোর্শেদের বন্ধু আশিকুর। ফলে সহজেই বড় অংকের এই ঋণসুবিধা পান।

এমনকি খেলাপি হওয়ার পরও ২০২০ সালে ব্যাংকের শাখাটির কর্মকর্তাদের জিম্মি করে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে ঋণ সুবিধা নেন তিনি। ১৩৩ কোটি টাকা মূল্যের আমদানির সেই ঋণের টাকা গত পাঁচ বছরেও শোধ করেননি তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মাহিনের ঋণমান ভালো না হলেও আইনি পদক্ষেপ নেয়নি এবি ব্যাংক।

এবি ব্যাংক ছাড়াও মাহিনের কাছে ঢাকা ব্যাংকের ১৮৫ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৭৫ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১০০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ১০০ কোটি, ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ৭২ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২৯ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকের ২৪ কোটি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ১৯ কোটি এবং মেরেডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ১২ কোটি টাকা পাওনা আটকে রয়েছে। মাহিন এন্টারপ্রাইজ, মাহিন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, এআরএল শিপ ব্রেকিং লিমিটেড এবং এআরএল গার্মেন্টেসের নামে এই ঋণ সুবিধা নিয়েছেন মাহিন।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের সুদিনে সম্পর্ক ও ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ সুবিধা নিয়েছেন মাহিন। কিন্তু সেই ঋণের বড় অংশ কানাডা, পানামা ও লাইবেরিয়াতে পাচার করেছেন। এছাড়া ঋণের টাকায় মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক হওয়া, জমি কেনা, বিলাসবহুল বাড়ি বানানো, নতুন নতুন মডেলের গাড়ি ক্রয়সহ বিলাসী জীবনযাপনের অভিযোগ এই তরুণ উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। ঋণ খেলাপি হওয়ায় ২০২০ সালে মেঘনা ব্যাংকের পর্ষদ থেকে বাদ দেওয়া হয় এই পরিচালককে।

এমআর/এমজে