পর্ষদ সভায় সিদ্ধান্ত
ইউসিবির সঙ্গে একীভূত নয়, নিজেরাই সবল হতে চায় ন্যাশনাল ব্যাংক
কোনো ব্যাংকের সঙ্গে এখনই একীভূত না হয়ে নিজেরাই সবল হতে চায় ন্যাশনাল ব্যাংক। এজন্য ইউসিবির সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ।
গতকাল (২৭ এপ্রিল) ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
পর্ষদের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, যেসব মন্দ ঋণের কারণে ব্যাংক সমস্যায় পড়েছে প্রথমে এসব ঋণ আদায়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাংকের সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব কাজ যদি নিজেরাই সফল করতে পারি, তাহলে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াবে এবং অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কোনো দরকার পড়বে না। তাই নিজ প্রচেষ্টায় সবল হওয়ার চেষ্টা করছে বর্তমান পর্ষদ।
এদিকে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বেসিক ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ফলে দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ সফল হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মার্জ করার বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে ‘চাপিয়ে দেওয়া’ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ব্যাংক একরকম হোঁচট খেল বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
একীভূতকরণ নিয়ে ব্যাংক খাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১৫ এপ্রিল জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ডেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আপাতত পাঁচটি ব্যাংকের বাইরে কোনো একীভূতকরণের আবেদন আর নেওয়া হবে না।
আরও পড়ুন
ইতোমধ্যে যেসব ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে এক্সিমের সঙ্গে পদ্মা, সিটির সঙ্গে বেসিক, ইউসিবির সঙ্গে ন্যাশনাল, সোনালীর সঙ্গে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একীভূত করা হবে। যদিও এর আগে গভর্নর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, আট থেকে ১০টি ব্যাংককে একীভূত করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৯ এপ্রিল জানানো হয় যে, বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত হচ্ছে সংকটে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক। ওইদিন ইউসিবি ব্যাংকের একজন পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডেকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈঠক করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বৈঠকে ইউসিবির কর্তৃপক্ষকে একীভূত করার বিষয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানানো হয়। এ সময় বৈঠকে ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
তার একদিন আগে ৮ এপ্রিল বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে ডেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
ওই বৈঠকেও বেসিক ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও ব্যাংকটির কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। গভর্নর এককভাবে এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে, প্রথমে সরকারি দুটি ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এগুলো হলো, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল। আর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রাকাব। একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এসআই/কেএ