১০ শতাংশ ছাড়াল কৃষি ও রপ্তানি ঋণের সুদহার
অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে ঋণের সুদহার বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে অনুযায়ী ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’ রেট বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি এবং কৃষি ও পল্লি ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্ট-এর সঙ্গে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ও কৃষি ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্ট-এর সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশের জায়গায় সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করতে হবে। এছাড়া প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্ট-এর সঙ্গে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশের স্থলে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। একইসঙ্গে কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মার্জিন হবে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এখন ঋণের সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, তা হলো ‘এসএমএআরটি’ বা ‘স্মার্ট’, যা সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত। প্রতি মাসের শুরুতে এ হার জানিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন
চলতি বছরের অক্টোবরে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে নভেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সেই হিসাবে, চলতি নভেম্বর মাস থেকে বড় অঙ্কের ঋণে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ সুদ নিতে পারবে ব্যাংক। এছাড়া প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ও কৃষি ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে নভেম্বরে ঠিক করা ঋণের এই সুদহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পরিবর্তন করা যাবে না।
এর আগে মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) প্রথম সভায় চার ধরনের সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সভায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিকসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতি সুদহারের গতিবিধি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং ব্যাংকিং খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের সমস্যা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে সবাই একমত হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এর মাধ্যমে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮ শতাংশে এবং আগামী জুন শেষে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা যাবে। এদিকে, বিনিময় হার ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সহজ করে বলা যায়, গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ হওয়া মানে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে একজন মানুষের যদি চাল, ডাল, চিনি, তেল, মাছ-মাংসসহ যাবতীয় খাদ্যপণ্য কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়; তাহলে এ বছরের অক্টোবরে একই খাবার কিনতে তার খরচ হয়েছে ১১২ টাকা ৫৬ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খাবার কেনায় প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ১২ টাকা ৫৬ পয়সা।
এসআই/এসএসএইচ