রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। বুধবার (১ নভেম্বর) থেকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানিকারকদের থেকে প্রতি ডলার ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় কিনে আমদানিকারকদের কাছে ১১১ টাকায় বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো। আন্তঃব্যাংকে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১১৪ টাকা। এতদিন ১১০ টাকায় ডলার কিনে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রির সিদ্ধান্ত ছিল।  

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন এ সিদ্ধান্ত বুধবার (১ নভেম্বর) থেকে কার্যকর করা হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাফেদার চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. আফজাল করিম, এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা।

বৈঠক প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. আফজাল করিম বলেন, প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা দর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া রেমিট্যান্সের একটি অংশ আন্তঃব্যাংকে বিক্রি করতে হবে।  

বৈঠকে বলা হয়, যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে মাসে ২ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসবে, বাধ্যতামূলক তারা অন্তত ১০ শতাংশ আন্তঃব্যাংকে বিক্রি করবে। আন্তঃব্যাংকে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১১৪ টাকা। মূলত ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক আগের দেনা পরিশোধ করতে পারছে না।

এর আগে, গত ২১ অক্টোবর এবিবি ও বাফেদার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতি ডলার কিনতে নির্ধারিত ১১০ টাকার সঙ্গে আরও আড়াই শতাংশ বেশি দেওয়া যাবে।

এছাড়া, সভায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার জন্য নতুন স্টুডেন্ট ফাইল খোলা এবং ক্রেডিট কার্ডের ডলার রেটের ক্ষেত্রেও নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে স্টুডেন্ট ফাইল ও ক্রেডিট কার্ডের বিল পেমেন্ট হবে ক্যাশ ডলার রেটে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এরপর থেকেই সংগঠন দুটি মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে এই দুই সংগঠন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আর কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলারের দাম ছিল ১১৯ টাকা থেকে ১২০ টাকা।

দেশের ডলারের দাম ঠিক রাখতে দর নির্ধারণের পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমছে রিজার্ভ।

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সেই রিজার্ভ (২৬ অক্টোবর) কমে হয়েছে ২ হাজার ৬৭০ কোটি (২৬ দশমিক ৭০ বিলিয়ন) ডলারে। আন্তর্জাতিক হিসাবপদ্ধতি ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬)’ অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে ২ হাজার ৮৯ কোটি (২০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন) ডলার।

এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসেবে দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন ডলারের নিচে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এখন যে পরিমাণ প্রকৃত রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো কষ্টকর। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন নেতিবাচক। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভ।

এসআই/কেএ