ডলার বুকিংয়ের বিষয়ে সংশোধন আনল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে দুই দিনের ব্যবধানে ডলার বুকিংয়ের নিয়মে পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে আগাম ডলার বুকিং দিতে পারবে শুধুমাত্র আমদানিকারকরা। বুকিংয়ের সর্বোচ্চ সময় হবে তিন মাস। আগের নির্দেশনায় এ সীমা ছিল সর্বোচ্চ ‘এক বছর’।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের সংশোধিত সার্কুলার থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক বছরের জন্য ডলার বুকিংয়ের নিয়ম চালু করে সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলারের ভবিষ্যৎ দাম (ফরওয়ার্ড রেট) সর্বোচ্চ কত হবে তাও বেঁধে দেওয়া হয়। যা নিয়ে জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সার্কুলার জারির দুই দিন পরই সংশোধন এনে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরও পড়ুন- ডলার বুকিং নিয়ে ‘ভয়’ নয় : বাংলাদেশ ব্যাংক
সংশোধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের পরিচালক মো. সারওয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফরওয়ার্ড রেট সার্কুলারের আগে বলা হয়েছিল— এক বছরের জন্য ডলার বুকিং দেওয়া যাবে। ডলারের দাম ‘এসএমএআরটি’ বা স্মার্ট হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি নিতে পারবে ব্যাংক। কিন্তু, ফরওয়ার্ড হয় সাধারণত এক সপ্তাহ বা সর্বোচ্চ এক মাসের জন্য। তবে নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র আমদানিকারকরা আগাম ডলার বুকিং দিতে পারবে। এটা তিন মাসের বেশি হবে না।
তিনি জানান, এখন কোনো আমদানিকারক তিন মাসের জন্য ডলার বুকিং দিলে তিন মাস পর তাকে প্রতি ডলারে ১১৩ টাকা ৫০ পয়সার মতো গুণতে হবে। এখন আমদানি ডলারের রেট ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।
আরও পড়ুন- ভবিষ্যতের জন্য ডলার বুকিংয়ের সুযোগ, দাম ১২৩ টাকা
এর আগে রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভবিষ্যতের জন্য ডলার বুকিং সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে আগাম ডলার নেওয়ার ক্ষেত্রে এক বছর পর সর্বোচ্চ দাম কি হবে তাও বেঁধে দেওয়া হয়। নতুন নিয়মে এক বছর পর ব্যাংক ডলারের দাম বর্তমানের চেয়ে স্মার্ট হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি নিতে পারবে।
এদিকে আগাম ডলার বুকিংয়ের নির্দেশনায় জনমনে শঙ্কাও সৃষ্টি হয়। ডলার ব্যবহারকারীরা বলছেন, আগামীতে ডলার সংকট আরও বাড়বে। এজন্য আগে থেকে ডলার বুকিং দিতে বলা হচ্ছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, এক বছর পর ডলারের রেট ১২৩ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
আরও পড়ুন- বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করলেই ‘শাস্তি’
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. আফজাল করিম বলেন, ডলার বুকিংয়ের বিষয়ে সার্কুলার হওয়ার পর অনেকে বলছে এক বছর পর ডলার রেট হবে ১২৩ টাকা- এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের ক্ষেত্রে যে ব্যাখ্যাটা দেওয়া হয়েছে, তা ঠিক হয়নি। আজকে সংশোধন আনা হয়েছে। যেটা হবে আগাম ডলার বুকিং দিতে পারবে শুধু আমদানিকারকরা, সর্বোচ্চ তিন মাসের জন্য।
এর আগে নতুন নিয়মে এক বছরের জন্য ডলার বুকিং দিয়ে রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। এজন্য গ্রাহককে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে। এটা নির্ধারণ হবে এখন যে পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হয় তার মাধ্যমে। যেটা স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল হিসেবে পরিচিত, সংক্ষেপে যার নাম ‘এসএমএআরটি’।
প্রতি মাসের শুরুতে স্মার্ট রেট জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাইয়ে স্মার্ট রেট ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, যা চলতি সেপ্টেম্বরেও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগাম ডলারের দরের জন্য ‘এসএমএআরটি’ রেটের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ যোগ করতে হবে। অর্থাৎ ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ হবে।
একটি ব্যাখ্যা দিয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডি বলেন, আগাম ডলার বুকিংয়ের ক্ষেত্রে বছরে ১২ শতাংশ অতিরিক্ত অর্থ দিতে হলে তিন মাসের জন্য দিতে হবে তিন টাকা। এখন আমদানি ডলারের রেট ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। তিন টাকা যোগ করলে সর্বোচ্চ রেট হবে ১১৩ টাকা ৫০ পয়সা।
রেমিট্যান্স-রপ্তানি ডলারের এক রেট
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের মূল্য এখন থেকে এক রেটে ধরা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ডলার প্রতি ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা। আগে যা ছিল ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ডলারের মূল্য ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে। এছাড়া আমদানিতে ডলারের দর হবে ১১০ টাকা। আগে যা ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থায় ডলার লেনদেন হচ্ছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়।
তবে কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুণতে হচ্ছে ১১৭ টাকা থেকে ১১৮ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের নগদে প্রতি ডলার কিনতে দেশি মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা পর্যন্ত।
এসআই/এমজে