ইসলামী বন্ড ‘সুকুক’ বাজারে ছাড়ল সরকার
দেশে প্রথমবারের মতো শরিয়াহভিত্তিক বন্ড ‘সুকুক’ বাজারে ছাড়লো সরকার। এ বন্ড থেকে চার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। সুকুকের টাকায় সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের অর্থায়ন করা হবে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ বন্ডে বিনিয়োগ থেকে পাওয়া যাবে বার্ষিক ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ মুনাফা।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ইসলামী বন্ডের নিলাম শুরু হয়েছে। চলবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। নিলামে প্রস্তাব দাখিলে আগ্রহীরা ১০ হাজার টাকা ও এর গুণিতক যে কোনো অঙ্কের বন্ড কিনতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সারাদেশে পানি সরবরাহ প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে আট হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় বাকি টাকা তোলা হবে। বিনিয়োগকারীদের টাকায় গড়ে ওঠা এ প্রকল্প থেকে পানি কিনবে সরকার। এ থেকে নির্ধারিত হারে মুনাফা পাবে বিনিয়োগকারীরা। প্রকল্প শেষে বিনিয়োগকারীদের মূল টাকা ফেরত দেওয়া হবে। অন্য সব সরকারি বন্ডের মতো সুকুক বন্ডের বিপরীতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসএলআর সংরক্ষণ করতে পারবে।
জানা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড সাধারণত ‘সুকুক’ নামে পরিচিত। সুকুক একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়ার আইনি দলিল। এখন থেকে সুকুক হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস, যে অর্থ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে।
প্রচলিত বন্ড ও সুকুক বন্ডের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিই হচ্ছে বন্ড। এতে ঋণের পরিমাণ, পরিশোধের সময় ও সুদের হার উল্লেখ থাকে। প্রচলিত বন্ডে সুদ, ফাটকা ইত্যাদি থাকায় তা শরিয়াহসম্মত নয়। আর সুকুক হচ্ছে এমন একটি বিনিয়োগ সনদ, যাতে সম্পদের ওপর মালিকানা দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। সাধারণত সুকুকধারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেন এবং মুনাফা পান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিজয়ের মাসেই অর্থ মন্ত্রণালয় দেশে শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় সুকুক ইস্যুর কার্যক্রম শুরু করে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগ সম্প্রতি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে।
দেশে ইসলামী ব্যাংকিং সেবাদাতা ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুদারাবা (মুনাফায় অংশীদারি), মুশারাকা (লাভ-লোকসান ভাগাভাগি), মুরাবাহা (লাভে বিক্রি), ইশতিসনা (পণ্য তৈরি), করজ হাসান (উত্তম ঋণ), সালাম (অগ্রিম ক্রয়) ও ইজারা (ভাড়া) সুকুক প্রচলিত রয়েছে।
সুকুক ছাড়ার দিক থেকে বর্তমানে মালয়েশিয়া বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও সুকুক প্রচলিত। মুসলিম দেশের পাশাপাশি অমুসলিম দেশেও এখন সুকুক চালু রয়েছে।
এসআই/এসএম