করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার। লকডাউন চলকালে ব্যাংকগুলো কি স্বাভাবিক নিয়মে চলবে, নাকি লেনদেন সীমিত করা হবে, এ বিষয়ে আগামীকাল (রোববার) সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার (৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার থেকে লকডাউন। আমরা রোববার বসব। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ব্যাংকগুলো লকডাউনের সময় কোন নিয়মে চলবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত রোববারের মধ্যে জানিয়ে দেব।

জানা গেছে, গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের সাধারণ ছুটি চলাকালীন দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো সীমিত আকারে লেনদেন চালু রেখেছিল। ওই সময় ‌সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত লেন‌দেন চলত। আর ব্যাংক খোলা ছিল বিকেল ৩টা পর্যন্ত।

শনিবার (৩ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান জরুরি সেবা দেয় সেই ধরনের প্রতিষ্ঠানগু‌লো লকডাউন চলাকা‌লে খোলা থাক‌বে। এছাড়া শিল্প-কলকারখানাও খোলা থাক‌বে, যা‌তে ক‌রে শ্রমিকরা শিফ‌টিংয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারে।

এর আগে গত ২৯ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার নতুন করে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে। এর মধ্যে পাঁচটি নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে বুধবার (৩১ মার্চ) প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ওই নির্দেশনাগুলো হলো
সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিয়ে/জন্মদিনসহ সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।

বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক (হোটেলে নিজ খরচে) কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করে করোনায় আক্রান্ত, করোনার লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা লক্ষণযুক্ত ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থানকালে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

এ ছাড়া সরকারের ১৮ দফার মধ্যে  বর্ণিত নির্দেশনায় জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান শিল্পকারখানা ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা, অসুস্থ, ৫৫ বছরের বেশি বয়সী কর্মকর্তা/কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় এই সিদ্ধান্ত পরিপালনের ক্ষেত্রে করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি পালন করে জনবলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করে জনবলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। সবশেষ চলতি বছরের ২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে নয় হাজার ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ছয় লাখ ২৪ হাজার ৫৯৪ জন।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আজকে পর্যন্ত (৩ এপ্রিল) ২৮ লাখ ৫১ হাজার ২৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে দশ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার ২৬৮ জন।

এসআই/ওএফ