বিদেশি মুদ্রার সংকট কাটাতে নানা শর্ত দেয়া হয়েছে আমদানিতে। এতে করে এলসির হার কমলেও আমদানি দায় পরিশোধ কমেনি। এখনো রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানিতে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। প্রবাসী আয়ও আশানুরূপ বাড়েনি। উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের ছাড় কমে গেছে। একই সময়ে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়ছে না বিদেশি বিনিয়োগও। যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসাবের ঘাটতির পাশাপাশি সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনেরও বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৪ হাজার ৮৭৯ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৪৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। এতে করে এক হাজার ৩৮২ কোটি ৮০ লাখ (১৩ দশ‌মিক ৮২ বি‌লিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৭ টাকা ধরে) এর পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি, বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ও আশানুরূপ রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ না থাকায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ছে বাংলাদেশ।

ফেব্রুয়ারি মাস শেষে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে  ৫৮৩ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবার পিছনে দেশের ব্যয় হয়েছে ৮৩৯ কোটি ডলার। সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৪২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

চলতি হিসাবের ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স)

চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভাল। কিন্তু দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স এখন ঋণাত্মক হয়েছে।

সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল এক হাজার ২৯৬ কোটি ডলার।

ওভারঅল ব্যালান্স

সামগ্রিক লেনেদেনেও (ওভারঅল ব্যালান্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সামগ্রিক লেনেদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৯৫ কোটি ডলার। এই সূচকটিতে আগের বছর একই সময় ঘাট‌তি ছিল ২২২ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এক হাজার ৪০১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের বছর পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ৩৪৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।

এফডিআই বেড়েছে ১১ দশ‌মিক ৯১ শতাংশ

দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-‌ফেব্রুয়ারি সময়ে বাংলাদেশ যেখানে ৩১৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩৫০ কোটি ডলারে উঠেছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে মাত্র ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে ১৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৪৬ কোটি ডলার।

ত‌বে আলোচিত সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগে (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। 

চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মা‌সে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ৪ কোটি ৩ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ৯ কোটি ২০ লাখ ডলার।

 

এসআই/এমজে